যেখানেই করোনা ভ্যাকসিন আগে পাওয়া যাবে দেশের জন্য আনা হবে: প্রধানমন্ত্রী

সংসদ প্রতিবেদক
বিশ্বের যেখানে আগে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে, দেশের জন্য সেখান থেকে তা সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে সরকার অর্থও বরাদ্দ রেখেছে। দেশের মানুষকে করোনা থেকে মুক্ত করার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নেওয়া হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি একথা জানান।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন দেশ গবেষণা করছে। সব দেশেই আমরা আবেদন দিয়ে রেখেছি। এজন্য টাকাও বরাদ্দ করে রেখেছি। যেখান থেকে আগে পাওয়া যাবে, সেখান থেকে আমরা নিবো। আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়ে। কিন্তু তা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেছে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লো। এতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েছি। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে। যেখানেই আবিষ্কার হোক, দেশের মানুষের জন্য তা সংগ্রহ করতে পারবো। এই বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সচেতন। করোনা সংকট মোকাবিলায় সকলকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেন এই দুর্যোগের সময়টা পার করতে পারি। কারণ করোনা চোখে দেখা যায় না। কিন্তু সারাবিশ্বকে একেবারে স্থবির করে দিয়েছে। বাংলাদেশে যখন এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সবাই এটি মোকাবিলায় একযোগে কাজ করেছে। প্রশাসন ও আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সম্মিলিতভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। যতদূর সম্ভব আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।

করোনাকালে চিকিৎসা ব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসা সেবা যাতে দিতে পারি তার জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত, চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়সহ সব ব্যবস্থা নিয়েছি। এজন্য পানির মতো টাকা খরচ হয়েছে। আমরা টাকা পয়সার দিকে তাকাইনি। এখানে হয়তো কেউ খুঁজে খুঁজে দুর্নীতি দেখতে পারেন। যে মুহূর্তে এ ধরনের একটি দুর্যোগ মোকাবিলার চিন্তা করতে হয়েছিল, তখন টাকা পয়সা কী হবে, কত খরচ হলো, কতটুকু সিস্টেম লস, তা বিবেচ্য ছিল না। আমাদের বিবেচ্য ছিল মানুষকে বাঁচানো। কীভাবে মানুষকে রক্ষা করবো সেই ব্যবস্থাটা নেওয়ার চিন্তা ছিল। আর সেটা করেছি বলেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। তিনি আরো বলেন, যেখানে এখনও বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের দেশের মতো ঘনবসতির দেশে এই কাজগুলো করা অত্যন্ত কঠিন।

বিরোধীদলীয় উপনেতার দেওয়া স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বিষয়ক বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলের বক্তা একটি চেয়ারের কথা বলেছেন। সেটি একটি চেয়ার নয়, একটি ইউনিট। বেশ কয়েকটি চেয়ার নিয়ে ইউনিট হয়। আর দুধের যে থার্মোমিটারের কথা বলছেন, সেটা থার্মোমিটার নয় সেটি একটি ল্যাবরেটরি। দুধের কোয়ালিটি কী থাকবে, তার জন্যই ল্যাবরেটরি তৈরি করতে যাচ্ছি। ল্যাবরেটরির দাম ধরা হয়েছে, থার্মোমিটারের নয়। তার জন্য এই দামটা। কাজেই আমি বলবো, যখন কোনও অভিযোগ আনা হবে যেন তথ্যগুলো ভালো করে নিয়ে এলে ভালো হয়। করোনাকালে এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেহেতু করোনাভাইরাসে সবার জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শিক্ষার্থীদের আমরা এক হাজার করে টাকা দেব, যাতে করে তারা তাদের কাপড়-চোপড়, টিফিন বক্স ও প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে। সংসদের চলমান অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। করোনাকালে নেওয়া সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২১টি প্যাকেজে এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। তা জিডিপির ৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এর বাইরেও ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বিশেষ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। প্রতিটি মসজিদ-মাদ্রাসায় টাকা পাঠিয়েছি। সরকারের প্রণোদনার বাইরেও আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। কোনও মানুষ যেন কষ্টে না থাকে। অর্থনীতির চাকাটা যাতে গতিশীল থাকে, আর সাধারণ মানুষ যেন কষ্ট না পায়, তার জন্য এই ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি। একের পর এক দূর্যোগ আসছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনার মধ্যে এলো ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। তারপর এলো দীর্ঘমেয়াদী বন্যা। এই অবস্থায় আমি চেষ্টা করেছি দেশের মানুষের যেন কষ্ট না হয়। মানুষ যেন কোনও দুর্ভোগ না পোহায়। সেটা আমরা কাটাতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আরো বলেন, বিপদ থেকে ভয়ে হতাশাগ্রস্ত যেন না হয়ে পড়ি। বিপদ আসবে। সেটা আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এর জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা সেই প্রস্তুতি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমের সমালোচনার আগে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাপনী ভাষণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের-এর বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা সমালোচনা করবো। কিন্তু যারা কাজ করে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হবে। মানুষ বিপদে পড়লে পুলিশকে আগে ডাকে। এমন কিছু না করা যাতে তারা ভয়ে ভীত হয়, তাদের কাজের উৎসাহটা নষ্ট না হয়। সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এটা মাথায় রাখতে হবে। জাতীয় পার্টির অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড জিয়াউর রহমানের আমল থেকে শুরু হয়েছে। আমাদের বহু নেতা-কর্মীর লাশ পাওয়া যায়নি। তারপরে একেবারে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলো। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। কীভাবে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবো, আমরা সেই চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমাদের মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কথা মতো কাজ করে যাচ্ছে। তারা যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে। তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এটা করছে। সেগুলো করতে গিয়ে যদি কিছু দুর্ঘটনা ঘটে, এটা খুব অস্বাভাবিক নয়, ঘটে। তবে আমরা কাউকে ছেড়ে দিচ্ছি না। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদ নির্মাণে কোনো নীতিমালা মানা হয়নি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে এমন একটি জায়গায়, যেখানে গ্যাসের লাইন ছিল। ওই ভবনের কোনো অনুমোদন ছিল না। জায়গাটাও কোন মসজিদ কমিটির না। এইভাবে অনুমোদিত অপরিকল্পিত করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে গেল, কতগুলো জীবন ঝড়ে গেল। ভবিষতে কেউ যদি কোনো স্থাপনা করেন অন্তত নিয়ম নীতিমালা মেনে করবেন। যাতে এধরণের দুর্ঘটনায় আর পড়তে না হয়। নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন তিনি।

শতভাগ বিদ্যুৎ: সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে দেশের ৯৭ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। মুজিববর্ষে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পারবো। এর সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চালন লাইন ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু করোনাভাইরাসে সবার জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে, এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শিক্ষার্থীদের আমরা এক হাজার করে টাকা দেবো। যাতে করে তাদের কাপড়-চোপড়, টিফিন বক্স তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে। তিনি আরো বলেন, কোনও সংকটের সময় পিছিয়ে থাকতে আমরা পারবো না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সংকট মোকাবিলা করবো। অর্থনীতির চাকা সচল রাখবো। এটাই আমাদের সরকারের নীতি।

Print Friendly, PDF & Email