নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত রাষ্ট্রর পরিচয় বহন করে। তাই সুষম, নিরাপদ ও শক্তিশালী খাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করছেন খাদ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুদার। হাতে নিচ্ছেন নতুন-নতুন পরিকল্পনা। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে আগামীতে বাংলাদেশের খাদ্য ব্যবস্থাপনা বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে জায়গা করে নিবে বলে আশাবাদী তিনি। একই সঙ্গে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রনে রাখতেও নিয়েছেন নানান পদক্ষেপ।
খাদ্য মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারী সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নত হচ্ছে সমাজে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠির জীবনমান। আগামী দিনে দেশে কোন গৃহহীন পরিবার থাকবে না উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গৃহহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করার কাজ চলছে। নতুন করে আরো বড় পরিসরে কাজ শুরু করা হবে। মেধাবী জাতি গঠনে মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছিল বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই আজ আমরা মাথা উচু করে বিশ্বের দরবারে তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করছি। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একসময় খাদ্যে ঘাটতির দেশ ছিল, মঙ্গা এলাকা ছিল। বর্তমানে আমরা সেই সংকট কাটিয়ে উঠে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন হওয়ার পাশাপাশি খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশে পরিনত হয়েছি। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সফল পরিকল্পনার মাধ্যমে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।
তিনি বলেন, চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। কারসাজির মাধ্যমে কেউ যাতে চালের মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে তার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চাল আমদানীর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে মজুত পরিস্থিতি যাচাই করা হচ্ছে। বাজার দর স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজন হলে চাল আমদানী করা হবে। তিনি বলেন, ধানের দামের সঙ্গে চালের দামের সামঞ্জস্য রাখতে হবে। কোন ক্রমেই যেন মিল মালিক এবং ব্যবসায়ীরা বাড়তি সুবিধা না নিতে পারে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একদিকে কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পান, অন্যদিকে ভোক্তারাও যাতে সহনীয় দামে চাল কিনে খেতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা এবং চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে কেউ যদি কারসাজির চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৫০ সালের ১৭ জুলাই নওগাঁ জেলার শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রয়াত কামিনী কুমার মজুমদার ও মাতা প্রয়াত সাবিত্রী বালা মজুমদার। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সাধন চন্দ্র মজুমদার অষ্টম। ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালে তিনি তাঁর পিতাকে হারান। তিনি নওগাঁ কেডি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং চৌমুহনী সরকারী ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করার পর নওগাঁ ডিগ্রী কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। চৌমুহনী কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিয়ামতপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাথে এবং দেশ পুনর্গঠনে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জীবন বাজী রেখে প্রতিবাদে সোচ্চার থেকেছেন সবসময়। তিনি জনগনের ভালবাসার মানুষ। তাই জনগনের অধীর আগ্রহে ১৯৮৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করেন। বিপুল ভোটে হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তখন সারা দেশে স্বৈরাচার বিরোধী তীব্র আন্দোলন চলছিল। এ সময় তিনি দুঃসাহসিক ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন চলাকালে তিনি হাজিনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, দুইবার প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও দীর্ঘ দিন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে সফলতার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
এই বর্ষীয়ান নেতা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার) থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নবম জাতীয় সংসদে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সাধন চন্দ্র মজুমদার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদে তিনি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তৃতীয় বারের মত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার) থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ দিয়ে ৭ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োজিত আছেন।