নাজিমুদ্দিন আহমেদ:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা স্বপ্ন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মানুষ যখন করোনা ভাইরাস মোকাবিলা নিয়ে উদ্বিগ্ন তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও সুযোগ্য নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। পার্লামেন্ট ভয়েসের বিশেষ প্রতিনিধিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরহাদ হোসেন এ কথা বলেন। তিনি ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪ তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা এবং উনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রাণঘাতি করোনার কবলে পড়ে বিপর্যস্ত গোটা দেশের অর্থনীতি ও ব্যবস্থা বাণিজ্য। এই মহামারি সামাল দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে চালু রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। যে সব দেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এগিয়ে তারা করোনাকালে বাড়তি সুফল পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দেশ রত্ন শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দেন যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণের বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচীর কারনে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। গত ১১ বছরে গড়ে ওঠা তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামোর জন্যই করোনার এই কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজতর হয়েছে। করোনার এই সংকটকালীন মূর্হুতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি যখন সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হলো তখন আমাদের গতানুগতিক জীবনে অনেকটা পরিবর্তন এলো। যার ফলশ্রুতিতে ঘরে বসেই আমরা যে ধরনের সেবা পাচ্ছি তা এক কথায় বলা গেলে ডিজিটাল বাংলাদেশেরই সুফল। দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে শিক্ষা, অফিস, আদালত, ব্যাংক, রাজনৈতিক সভা, কনফারেন্স ইত্যাদি অনলাইন ভিত্তিক করার পাশাপাশি আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাকাটা আমরা ঘরে বসেই করতে পারছি। এছাড়া করোনাকালীন দূর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য করোনা বিষয়ক তথ্য সেবা, টেলিমেডিসিন সেবা, সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য জরুরী খাদ্য সহায়তা যুক্ত হচ্ছে। প্রযুক্তির এই সহজলত্যতার কারণে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি বিল ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারছি। শুধু শহরেই নয় বরং জেলা উপজেলা সদর ছাড়িয়ে গ্রাম, এমনকি প্রত্যন্ত ও দূর্গম অঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তির সেবা পৌছে দিয়েছেন বর্তমান সরকার। করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার প্রধান উপায় হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে সেই সুখী সমৃদ্ধ শিক্ষিত জনগোষ্টির বৈষম্য, দূর্নীতি, দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ, যা প্রকৃতপক্ষেই সম্পূর্ণ ভাবে জনগণের রাষ্ট্র এবং আরো মূখ্য চালিকাশক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। বাংলাদেশের জনগনের উন্নত জীবনের প্রত্যাশা, স্বপ্ন, আকাংক্ষা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বস্তুত জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা প্রধান সোপান। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি প্রত্যাশা ছিল বাংলার মানুষের জন্য সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠা করা। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের সেই স্বপ্ন পূরন করবে বলে আশা করছি।
শিক্ষার্থীরা আগামী বছর জানুয়ারী মাসের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক পাবে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীরা সময় মত পাবে। পাঠ্যপুস্তক মুদ্রনে প্রেসের কোনো সমস্যা নেই। স্কুল পর্যায়ে বই ছাপানোর কাজ চলছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে শিক্ষক শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হবে। নিয়ম হতে পারে সীমিত আকারে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ক্লাস চালু থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য এবং জনপ্রশাসন এই ৩টি মন্ত্রণালয় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশ খুবই ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাইতে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের বাংলাদেশে মৃত্যুর হার কম। এর কারন হচ্ছে আপনার লক্ষ্য করবেন লকডাউনে আমরা সবাইকে সচেতন করেছি। ঘরে বসে অনেকে অফিসের কাজ করেছে। ধান কাটা মৌসুমে কৃষকদের যাতে ক্ষতি না হয় এজন্য লকডাউনের মধ্যে শ্রমিক সংগ্রহ করা হয়েছে। ফরহাদ হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাস যেতে না যেতেই দেশে আমফান বন্যা আমাদের মোকাবেলা করতে হয়েছে। একটি জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি এবারের বন্যায় আমাদের দেশের ১২০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বিএনপির ভূমিকা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির উচিৎ ছিল করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় অসহায় দুস্থ মানুষের সাহায্যের্থে এগিয়ে আসা। তারা এগিয়ে না এসে সরকারের সমলোচনা করতে ব্যস্ত। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়।
ফরহাদ হোসেন বলেন, এবারে করোনা ভাইরাসের কারনে মেহেরপুরে ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের যে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল তা অন্যান্য বছরের মতো যথাযোগ্য ভাবে উদ্যাপন হয়নি। তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস ভাবে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হয়। আমরা ১৫ আগস্ট যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালন করি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ১৫ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কেক কেটে জন্মদিন পালন করে। তবে এবার ১৫ আগস্টে তাদের কেক কেটে জন্মদিন পালন করতে দেখিনি।