রফিকুল ইসলাম সবুজ, বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক সময়ের আলো:
‘সামরিক শাসক আইয়ুব খান দেশে মৌলিক গণতন্ত্র চালু করেছিল। আমাদের সমাজপাঠ নামে একটি বইতে এসব পড়তে হতো। ক্লাস নাইনে সমাজপাঠ পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নের উত্তর লিখতে গিয়ে শেখ হাসিনা মৌলিক গণতন্ত্রের কঠোর সমালোচনা করে অনেক কিছু লিখে দিয়েছিলেন। হাসিনা যে খুবই দৃঢ়চেতা ছিলেন এটা তারই প্রমাণ।’ কথা গুলো বলছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু। তিনি বলেন, খাতায় এরকম লেখার কারণে স্কুল থেকে খবর পেয়ে তখন শেখ হাসিনার গৃহশিক্ষককে এসে স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। আজিমপুর স্কুল (বর্তমানে আজিমপুর গভ: গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ) জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি জানান, ৬৪ সালে তাদের ওপর দায়িত্ব পড়েছিল স্কুলে ধর্মঘট করানো ও পিকেটিং করার। ধর্মঘটের কথা ছাত্রীদের মধ্যে প্রচার ও পিকেটিং করার কারণে ঐসময়ে তাকে এবং শেখ হাসিনাকেসহ তাদের ১০জন সহপাঠীকে স্কুল কর্তৃপক্ষ শোকজ করেছিল। শেখ হাসিনা স্কুল জীবন থেকেই অনেক দুরন্ত, সাহসী ও সংগ্রামী ছিলেন জানিয়ে মিনু বলেন, কলেজে সাধারণ ছাত্রীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তাও অনেক বেশি ছিল। একারণে ১৯৬৬-৬৭ সালে বকশীবাজার গভ: ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেছা কলেজ) ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন ছাত্র ইউনিয়ন খুব শক্তিশালী হলেও শেখ হাসিনা জনপ্রিয়তার কারণে জয়ী হন। নিজে ১৯৬৫-৬৬ সালে কলেজ ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন জানিয়ে নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, শেখ হাসিনা মুলত কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি বলেন, তাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো ছিল সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের জন্য ছাত্রদের সংগ্রামে মুখর। এই সংগ্রামই পরে ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনে রূপ নেয়। তখন শেখ হাসিনাসহ তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন।
শেখ হাসিনার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সহপাঠী সংসদ সদস্য কাজী রোজী বলেন, শেখ হাসিনা, নাসিমুন আরা হক মিনু, জেলী সহ তারা কয়েক জন সতীর্থ কলেজে শহিদ মিনার তৈরি করেছিলেন কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা উপেক্ষা করে। একারণে কলেজ অধ্যক্ষ তাদের কয়েক জনকে আটকে রেখেছিলেন। তবে ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি জানান, ৬৫ থেকে ৬৯ এর গণআন্দোলন পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তারা একসঙ্গে স্বত:স্ফুর্ত ভাবে অংশ নিয়েছেন। শেখ হাসিনা আড্ডা অনেক পছন্দ করতেন জানিয়ে কাজী রোজী বলেন, ‘আমাদের আড্ডা ফুরাতো না। ক্যান্টিনবয় মোহাম্মদ আলী আমাদের তাগিদ দিত ‘ঘন্টা শেষ হয়েছে বাড়ি যান আপারা, আমি রুম পরিস্কার করুম।’ অনেক সময় হাসিনা অর্ধেক খাবার রেখেই উঠে গিয়ে বলত ‘চল যাই, ওদের কাজ ওদেরকে করতে দিতে হবে।’