নিজস্ব প্রতিবেদক
আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। পূর্ণাঙ্গ আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তিনি একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছেন। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি দেশকে আধুনিক অবকাঠামো সমৃদ্ধ করে তুলছেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিশ্বে, স্থান করে নিয়েছে মহাকাশে। আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকার গঠনের শুরু থেকে মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এই পরিকল্পনাগুলো তিনি সরকার গঠনের আগ থেকেই নিয়ে রেখেছিলেন। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী পরিস্থিতিতে কারাগারে থাকা অবস্থায়ই দেশের এই উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা তিনি চিন্তা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক বিভিন্ন সময় তুলে ধরতে গিয়ে একাধিকবার তিনি এ কথা জানিয়েছেন। ওই সময় প্রায় এক বছর তাকে কারাগারে কাটাতে হয়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন টানা তিন মেয়াদের সরকারের সময় এই সাড়ে ১২ বছরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম, বিশেষ করে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও তিনি বাংলাদেশেকে নতুন যুগে প্রবেশ করিয়েছেন। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ যা বদলে দেবে বাংলাদেশের দৃশ্যপট ও অর্থনৈতিক গতিধারাকে। শুধু প্রকল্প গ্রহণই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং তদারকি করছেন। উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্ব ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, যা এখন বাস্তবায়নের দোড় গোড়ায়। এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে শেখ হাসিনাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। আগামী ২০২১ সালের জুন নাগাদ পদ্মাসেতুতে যানবাহন চলাচলের টার্গেট রয়েছে। এই সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং ওই অঞ্চলের দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে।
দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে শেখ হাসিনার আরেক চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ, যা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান। শেখ হাসিনা এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিশ্বে পদার্পণ করে এবং বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের সদস্য পদ লাভ করে। রাশিয়ার প্রযুক্তি ও সহযোগিতায় এক লাখ ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৩ ও ২৪ সালে। বাংলাদেশ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই-১। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণেরও প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে স্যাটেলাইট বিশ্বে। শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার ফলশ্রুতিতেই এ সব কিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। তার সরকারের প্রথম মেয়াদেই দৃশ্যমান হয়েছে এই ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট, কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন। ইন্টারনেট জগতে বাংলাদেশ চতুর্থ জেনারেশনে (৪-জি) প্রবেশ করেছে। আগামী বছর বাংলাদেশে ৫-জি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দ্রুত এগিয়ে নিতে কৃষি, শিল্প উৎপাদনের পাশাপাশি অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপরও তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজধানী এবং রাজধানীর বাইরে বিশেষ করে ব্যবসা বাণিজ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলকে বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে।
রাজধানীতে যানজট দূর করতে নির্মাণাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল এই মেট্রোরেল এখন দৃশ্যমান। দ্রুতগতিতেই চলছে মেট্রোরেল লাইন ৬ এর কাজ। করোনার কারণে গতি কিছুটা কমে গেলেও আবারও ঘুরে দাড়াচ্ছে এই প্রকল্প। প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কাজ শেষ প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। ১২ কিমি উড়াল পথের মধ্যে প্রায় ১১ কিমি দৃশ্যমান হয়েছে। এ অংশের নয়টি ষ্টেশনের মধ্যে ৬টি কাজই চলছে পুরোদমে। পাশাপাশি প্রকল্পের ২য় ধাপের কাজ শেষ প্রায় অর্ধেক। মেট্রোরেল ট্রেন নির্মাণের কাজ চলছে জাপানে। ১টি নির্মাণের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। আরো ৪টি ট্রেনের নির্মাণ কাজ চলছে, যা ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মেট্রোরেলের ষ্টেশন নির্মাণের ফেব্রিকেশনের কাজ চলছে গাজীপুরে। ১ম ধাপের ৮টি ষ্টেশনের ফেব্রিকেশনের কাজ শেষ পুরোপুরি। এদের সংযোজন কাজ চলছে। বাকি ১ টির কাজও একমাসের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের প্যাকেজ- ২,৩,৪, ৭,৮ এর কাজ পুরোদমে চলছে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার আশাবাদী। হলি আর্টিসানের হামলার কারণে প্রকল্পের কাজ ছয়মাস পুরোপুরি বন্ধ ছিল। তবে পরবর্তীতে সেই ছয় মাস পুষিয়ে নেয়া হয়েছে। রাজধানীর উপকণ্ঠ হেমায়েতপুর থেকে গুলশান হয়ে ভাটারা এবং বিমান বন্দর থেকে রামপুরা হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত আরও দুইটি মেট্রো রেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ও স্থানে নির্মাণ হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার। নির্মাণ হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
উন্নয়নের পূর্ব শর্ত বিদ্যুতের চাহিদা মোটাতে শেখ হাসিনা এই সেক্টরকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে তার সরকার ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ি বর্তমানে দেশে ২১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে, যা চাহিদার চেয়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট বেশি। আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। মাতারবাড়ী ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে। নির্মাণাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২১ সালের শেষ দিকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ আসতে শুরু করবে। রামপালে প্রায় ১৮৩৪ একর জমির ওপর এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ করছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। নির্মাণাধীন পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে এ বছরই ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বন্দরের ওপর চাপ কমাতে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হচ্ছে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬ মিটার গভীরতায় চ্যানেল ড্রেজিং সম্পন্ন করে বন্দর গড়ে তোলা হবে। সমুদ্র পথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার সুদূর প্রসারি পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। এই সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণের জন্য কারিগরি ও অর্থনৈতিক সমীক্ষা শেষ করেছে জাপানের প্যাসিফিক কনসালট্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল (পিসিআই)। গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি) পদ্ধতিতে বন্দরটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রিসভায় দীর্ঘ দিন থাকা সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়ন পরিকল্পনা আধুনিক ও বিজ্ঞান মনস্ক। একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন শেখ হাসিনা সেটা নিচ্ছেন। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া একটি দেশ আধুনিক হতে পারে না। সে কারণে তিনি আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। বিজ্ঞান আত্মস্থ করা এবং ব্যবহার করার ব্যবস্থা শেখ হাসিনা করেছেন। আজ গ্রামে ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশ এভাবে এগিয়ে যাবে কে ভেবেছিলো। শেখ হাসিনা সেটা করেছেন। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছেন। এগিয়ে চলেছে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ। আর এসব করতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হয়েছে। আজ অগ্রসরমান বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনার নাম একাকার। বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ আর শেখ হাসিনার নাম একাকার। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ দিয়েছেন আর শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশ গড়ছেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মহামারির মধ্যেও দেশ ও মানুষের জন্য দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। গত কয়েক মাসে শুধু কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে সরকার যেসব নির্দেশনা জারি করেছে সেগুলো পর্যালোচনা করলে এবং পরিমাণ বিবেচনা নিলেই কিছুটা অনুমান করা যায় জনগণের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে দিন-রাত কতটা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুধু কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয় যেসব নির্দেশনা জারি করেছে তার পরিমাণ ১ হাজার ৯৭৬ পৃষ্ঠা। ভবিষ্যতে করোনা মহামারির মতো দুর্যোগ মোকাবিলার কথা চিন্তা করে এসব নির্দেশনা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এসব নির্দেশনা বই আকারে ৫টি ভলিউমে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার তত্ত্বাবধায়নে করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে জারি করা এসব প্রজ্ঞাপন সংকলন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজকে বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যেসব নির্দেশনা জারি করেছে তার পরিমাণ দেখলে কিছুটা অনুমান করা যায় এই করোনার মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দিনরাত কতটা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি বিষয়ের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন এবং সে অনুযায়ী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে সরকারের জারি করা নির্দেশনাগুলো সংরক্ষণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এসব নির্দেশনা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, এই করোনা মহামারির মধ্যেও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনি প্রতিটি বিষয়, প্রতিটি মুহূর্ত মনিটর করছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজের জীবনের চেয়ে দেশ ও দেশের জনগণকে বড় মনে করেন। তাই ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, জনগণকে সচেতন করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি চাঙা রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় সরকার। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং জীবিকা নিশ্চিত করতে এখন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার (জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ) ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। সুত্র: বাংলানিউজ।
সরকার ঘোষিত ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ গুলো হচ্ছে: ১. রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ তহবিল (মোট বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা), ২. ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধায় মোট বরাদ্দ ৩৩ হাজার কোটি টাকা), ৩. ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা (মোট বরাদ্দ ২০ হাজার কোটি টাকা), ৪. বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবির্তিত ইডিএফ এর সুবিধা বাড়ানো (মোট বরাদ্দ ১২,৭৫০ কোটি টাকা), ৫.প্রি শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম (মোট বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা), ৬. চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ সম্মানি (১শ কোটি টাকা), ৭. করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অথবা মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ (৭শ ৫০ কোটি টাকা), ৮. বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ (মোট বরাদ্দ ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা), ৯. ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রি (মোট বরাদ্দ ২৫১ কোটি টাকা), ১০. লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ (মোট বরাদ্দ ১২শ ৫৮ কোটি টাকা), ১১. ভাতা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে (মোট বরাদ্দ ৮১৫ কোটি টাকা), ১২. গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ (মোট বরাদ্দ ২১শ ৩০ কোটি টাকা), ১৩. বোরো ধান/চাল ক্রয় কার্যক্রম (মোট বরাদ্দ ৮৬০ কোটি টাকা), ১৪. কৃষিকাজ যান্ত্রিকীকরণ (৩২শ ২২০ কোটি টাকা), ১৫. কৃষি ভর্তুকি (৯ হাজার ৫শ কোটি টাকা), ১৬. কৃষি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম (মোট বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা), ১৭. নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক/ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম (মোট বরাদ্দ ৩ হাজার কোটি টাকা), ১৮. কর্মসৃজন কার্যক্রম (পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পিকেএসএফ এর মাধ্যমে ২ হাজার কোটি টাকা), ১৯. বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এপ্রিল-মে/২০২০ মাসে স্থগিত করা ঋণের আংশিক সুদ মওকুফ বাবদ সরকারের ভর্তুকি (২ হাজার কোটি টাকা), ২০. ক্রেডিট রিস্ক শেয়ারিং স্কিম ফর এসএমই সেক্টর (২ হাজার কোটি টাকা) এবং ২১. রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকাশিল্পের দুস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন (১১শ ৩২ কোটি টাকা)।