সংসদ প্রতিবেদক :
করোনা মহামারির দুর্যোগকালে ঝুঁঁকি থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বাজেট অধিবেশনসহ দুটি অধিবেশন সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। করোনাকালে সবাই গৃহবন্দি থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সংসদ অধিবেশন পরিচালনা করায় তিনি প্রসংশিত হয়েছেন দেশে বিদেশে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎকালে রীভা গাঙ্গুলি দাশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংসদ পরিচালনা করার পাশাপাশি ভার্চুয়াল পদ্ধতি অনুসরণ করে সব ধরনের কার্যক্রম সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করায় স্পিকার এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেছেন। বিদায়ী হাইকমিশনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন।
সাক্ষাৎকালে স্পিকার ও বিদায়ী হাইকমিশনার বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করেন। স্পিকার বলেন, করোনার দুর্যোগকালে ঝুঁঁকি থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বাজেট অধিবেশনসহ দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে চিকিৎসা পদ্ধতিতে অনলাইন প্রক্রিয়ার সংযোজন হয়েছে, যা মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। ভারতকে বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এসময় সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান স্পিকার।
এদিকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বসা একাদশ সংসদের নবম অধিবেশন গত ১০ সেপ্টেম্বর শেষ হয় পাঁচ কার্যদিবসে। সংক্রমণ এড়াতে এবারও অধিবেশনে নেওয়া হয় বেশ কিছু ব্যবস্থা। মহামারীকালে হওয়া আগের দুটি অধিবেশনের মতই সংসদ সদস্যরা মাস্ক ও গ্লাভস পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অধিবেশনে অংশ নেন। অধিবেশন কক্ষে কর্মরত কর্মচারীরাও মাস্ক, গ্লাভস ও মাথা ঢেকে দায়িত্ব পালন করেন।
এ অধিবেশনে বিল পাস হয়েছে মোট ছয়টি। এগুলো হল- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২০, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২০; চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল ২০২০, বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস বিল-২০২০, বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল বিল-২০২০ এবং গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল-২০২০। ৭১ বিধিতে পাওয়া ৩৮টি নোটিসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য ছিল ২৭টি। তার মধ্যে সাতটি প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। অন্য মন্ত্রীদের জন্য এ অধিবেশনে মোট ৬৬১টি প্রশ্ন আসে, যার মধ্যে ১৮২টির উত্তর দিয়েছেন তারা।
গত মার্চ মাসে দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরু হওয়ার পর এটি তৃতীয় অধিবেশন। গত বাজেট অধিবেশনের মত এবারও অধিবেশনে যোগ দিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হয় সংসদ সদস্যদের। গত এপ্রিল ও জুনে সংসদের সপ্তম ও অষ্টম (বাজেট) অধিবেশন বসে। সে সময়ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অধিবেশন পরিচালনা করা হয়। সংসদ অধিবেশন চলাকালে দায়িত্বরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হয়। সপ্তম অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের কোভিড-১৯ টেস্ট করানোর প্রসঙ্গ আসেনি। তবে এরপর বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি আক্রান্ত হওয়ার পর অষ্টম অধিবেশনের মাঝপথে সংসদ সদস্যদেরও পরীক্ষা করাতে অনুরোধ করা হয়। এবার ৬ সেপ্টেম্বর অধিবেশন শুরুর আগেই তাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে বলা হয়। তালিকা করে প্রতিদিন ৮০ জনের মত সংসদ সদস্য অধিবেশনে অংশ নেন। অধিবেশন চলাকালে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের সবার কোভিড-১৯ পরীক্ষায় নেগেটিভ সনদ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। সংসদের বিগত অষ্টম অধিবেশন গত ৯ জুলাই শেষ হয়। সংবিধানের বিধান মতে সংসদের দুটি অধিবেশনের মধ্যে ৬০ দিনের বেশি বিরতি থাকার সুযোগ নেই। যে কারণে এ অধিবেশন ডাকতে হয়। এবারও সংসদ অধিবেশনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। সংসদ টিভি দেখে তাদের খবর সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল।