নিজস্ব প্রতিবেদক
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব এবং দখল-দূষণের কারণে দেশের নৌপথ এবং নদ-নদীর সংখ্যা ও আয়তন প্রতিনিয়ত কমছে, যা পরিবেশ ও মানুষের জীবন-জীবিকাকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এ অবস্থায় নৌপথ ও নদী রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণও শুরু হয়েছে। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কঠোর অবস্থানের কারনে নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় এই উচ্ছেদ কার্যক্রম ও নৌপথ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নৌপথ রক্ষায় নিজেই ছুটে যান ঘটনাস্থলে। এতে কর্মকর্তা কর্মচারিদের মধ্যে কাজের গতিও বেড়েছে আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নৌ পথের উন্নয়ন ও নদীপারের বন্দরগুলো দেখভালের দায়িত্ব নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের। আর নদীর দূষণ ঠেকানোর কাজে রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সর্বশেষ নদীর দখল ও পরিবেশদূষণ ঠেকাতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার নদীর সীমানা নির্ধারণের পাশাপাশি সারা দেশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান জোরদার করেছে। একই সঙ্গে আবহমান বাংলার চিরায়ত নদীকে স্বরূপে ফেরানোর লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নৌপথ রক্ষায় বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগ নিয়মিত খনন কাজ অব্যাহত রেখেছে। নদীবন্দরের পাশাপাশি নদ-নদী রক্ষায় সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার দখলদারদের উচ্ছেদের পাশাপাশি ভবিষ্যতে দখল বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। যার মাধ্যমে সারা দেশে নদ-নদীসমূহ দখলকারীদের হাত থেকে রক্ষা নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নদী ও পরিবেশ রক্ষার নামে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা প্রবেশ করার চেষ্টা করতে পারে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেনা। তারা নদী রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের ভাল উদ্যোগগুলোকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী গোষ্ঠি নদী ও পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত সরকার পর্যায়ের আলোচনা সভায় অংশ নিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নদী রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদেরকে খুবই তৎপর থাকতে হবে। নদী ও পরিবেশ রক্ষায় আমরা অনেক এগিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নদী ও পরিবেশ রক্ষায় শুরু থেকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন। বর্তমান সরকার নদী দখল ও দূষণরোধে বাস্তবতার নিরিখে কাজ করছে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার বুড়িগঙ্গাসহ শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর নাব্যতা এবং নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে পরামর্শ প্রদান, সুপারিশ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের জন্য ‘টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ‘টাস্কফোর্স’ এর কাজ করছে। কর্ণফুলীসহ দেশের বড় নদীগুলো রক্ষায় আরো একটি কমিটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে কাজ করছে।
এদিকে পাওয়ার প্ল্যান্ট, ইকোনমিক জোন বা অন্য কোন উন্নয়নের কথা বলে নদী দখল করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। গত ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকা-বরিশাল নৌপথের চাঁদপুর লক্ষ্মীরচর-আলুরবাজার-ঈশানবালা-হিজলা-উলানিয়া-মিয়ারচর নৌপথ পরিদর্শনকালে তিনি এই কথা জানান। তুরাগ নদীর তীরভূমি দখল করে আরিশা পাওয়ার প্ল্যান্টের স্থাপনা নির্মাণে হাইকোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পাওয়ার প্ল্যান্ট, ইকোনমিক জোন বা অন্য কোন উন্নয়নের কথা বলে নদী দখল করা যাবে না। এখানে আমরা নদীর অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করছি। এক্ষেত্রে পাওয়ার প্ল্যান্টের কোনও সম্পর্ক নাই।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়িক স্থাপনাকে ঘিরে কেউ যদি নদী দখল করতে চায়, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। পাওয়ার প্ল্যান্ট পাওয়ার প্ল্যান্টের জায়গায়, ইকোনমিক জোন ইকোনমিক জোনের জায়গায় আছে। কিন্তু যখন এটা নদীর জায়গায় আসবে তখনই সমস্যা।’
এই বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, ‘হাইকোর্ট এটা নিষ্পত্তি করতে বলেছিলেন। তার যে আবেদন ছিল, ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আমরা যেন উচ্ছেদ না করি। আমরা তো এখানে পুরো পাওয়ার প্ল্যান্ট উচ্ছেদ করছি না। আমরা শুধু উনি যতটুকু নদীর জায়গা ভরাট করেছেন তা সরিয়ে নিতে বলেছি। আবার আমরা হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি কোনও জায়গাটুকু তাকে সরাতে হবে। এটা আমরা তাকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। আরিশা ইকোনমিক জোনের বিষয়ে বেজা একটি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যতটুকু নদীর জায়গা আছে তা ছেড়ে দিয়ে ইকোনমিক জোন করতে হবে।’
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে ফেরি আট দিন বন্ধ ছিল। কারণ অতিরিক্ত স্রোত ও পলি জমে যাওয়ার কারণে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং পথগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একইভাবে আমাদের বরিশালে রুটের মিয়ার চরেও নৌ পথও বন্ধ হয়ে গিয়েছিলে। এখন আমাদের ইলিশা দিয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে। সেই অবস্থায় আলু বাজার থেকে হিজলা হয়ে নৌপথ হয় কিনা সেটা নিয়ে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষে দুটি সভা করেছি। সেখানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের হাইড্রোগ্রাফার ও প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। আমাদের বিআইডব্লিউটিএ’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছিলেন। তিনি বলেন, সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কীভাবে ড্রেজিং করলে নৌ চলাচল করতে পারবে। আমরা সর্বশেষ সার্ভে রিপোর্টে আশ্বস্ত হয়েছি, আগে যে সব ছোট ছোট লিঙ্ক নৌপথ আছে সেগুলো সচল করতে পারি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ, বিআইডব্লিউটিএ ’র সদস্য পরিচালনা ও পরিকল্পনা মো. দেলোয়ার হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) আবদুল মতিন, পরিচালক বন্দর ও পরিবহন কাজী ওয়াকিল নেওয়াজ, পরিচালক নৌ নিরাপত্তা মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।