মাদক নিয়ন্ত্রণে ডোপ টেস্টের জন্য আলাদা সংস্থা চান সংসদীয় কমিটির সভাপতি টুকু

সংসদ প্রতিবেদক:
মাদক নিয়ন্ত্রণে ডোপ টেস্টের জন্য আলাদা সংস্থা প্রয়োজন বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু। রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে ডোপ টেস্ট- এই মুহূর্তে করণীয় ‘ শীর্ষক মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, পুলিশের ডোপ টেস্ট শুরু হয়েছে। গাড়ি চালকদের ডোপ টেস্ট শুরুর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চাকুরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট শুরুর কার্যক্রম চলছে। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে হবে। এতে মাদকের চাহিদা কমবে। ফলে দেশে মাদকের প্রবেশও কমবে। তিনি আরো বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় আমি ছাত্র লীগ ও যুব লীগের কমিটিতে মাদকাসক্তদের রাখতে দেয়নি। এটা সারাদেশে করতে হবে। পুলিশ সদস্যরাও মনে করেন, শুধু তাদের কেন সকল সংস্থার সদস্যদের ডোপ টেস্ট করানো হোক। সর্বোপরি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাস এবং সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা। বক্তৃতা করেন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আহসানুল জব্বার। সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন পার্লামেন্ট নিউজ-এর সম্পাদক সাকিলা পারভীন। অনুষ্ঠানে বক্তারা মাদকাসক্তদের চিহ্নিত করতে পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট শুরুর বিষয়টিকে ইতিবাচক মন্তব্য করে বলেছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারী বেসরকারী সকল সংস্থার সদস্যদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তারা এই আহ্বান জানান।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, মাদকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও বলব, মাদক নির্মূলে আমরা বসে নেই। আমরা চেষ্টা করছি, কিভাবে মাদকের থাবা থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করা যায়। তিনি আরো বলেন, দেশে মাদকের চাহিদা কমলে যোগানও কমে যাবে। তাই সন্তানরা যাতে মাদকাসক্ত না হয়ে পড়ে সেজন্য অভিভাবকদের সচেতন হওয়া দরকার। সকলে সচেতন হলে মাদকমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব হবে।
সভাপতির বক্তব্যে স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা বলেন, মাদক পাচার, বেচাকেনার ক্ষেত্রে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বাবা মা খবর রাখছেন না, ছেলে-মেয়ে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে যাচ্ছে, কি করছে? ব্যস্ততার কারণে বাবা-মা ছেলে মেয়েদের সময় দিচ্ছেন না। এতে করে তারা মাদকতাসক্ত হয়ে পড়ছে। তিনি আরো বলেন, ব্যবসার কৌশল বদলে মাদক কারকারীরা এখন নারী ও শিশুকে ব্যবহার করছে। যা খুবই দুংখজনক ও উদ্বেগের বিষয়। তাই সমাজ থেকে মাদক নিমূল করতে মাদকের গডফাদার আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। তিনি শিক্ষার্থী ও চাকুরিজীবীদের পাশাপাশি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকলকে ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, দেশে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। প্রতিবছর মাদকের পেছনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে শিশু ও নারীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ইয়াবা ছেলেদের মতো মেয়েরাও অবলীলায় গ্রহণ করছে। বিগত ১০ বছরে মাদকাসক্তির কারণে দুইশো মা-বাবা খুন হয়েছেন।
আরো উল্লেখ করা হয়, মাদকের ভয়াবহতার চিত্রটা বেশ পরিস্কার। গণমাধ্যমগুলোই বলছে দু’একটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া, আজ দেশে যত অপরাধ হচ্ছে প্রতিটির গোড়া মাদকের ঘরে। এই যে গ্যাঙ নামের অপসংস্কৃতি- এই গ্যাঙ তৈরির পেছনেও রয়েছে মাদক। মাদকের কারণে উচ্ছনে যাচ্ছে বহু মেধাবী শিক্ষার্থী। ভাঙছে সামাজ, সংসার ও পরিবার। মাদকের টাকা যোগাড় করতে মা কিংবা বাবার গলায় ছুরি ধরছে সন্তান। কোন কোন ক্ষেত্রে ছুরি বসিয়ে দেওয়ার ঘটনাও উঠে এসেছে গণমাধ্যমগুলোতে। ভয়াবহ সব উদাহরণ প্রকাশ হচ্ছে প্রতিদিনের খবরে। দেশে মাদকাশক্তদের তিনভাগের দুই ভাগই তরুণ।
জরিপ তথ্য তুলে ধরে প্রবন্ধে বলা হয়, প্রতিদিন গড়ে তাদের ১৫০ টাকার মাদক লাগে। এই হিসেবে একজন মদকাসক্ত বছরে ৫৪ হাজার ৭৫০ টাকার মাদকের জন্য ব্যয় করে। দেশে ২৫ লাখ মাদকাসক্ত ধরা হলে তারা বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকার মাদক সেবন করে। এসব মাদকের পুরোটাই অবৈধভাবে দেশে আসছে। আর পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

Print Friendly, PDF & Email