সংসদ প্রতিবেদক:
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনেই সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ-২০২০) উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অধিবেশনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অধিবেশনেকে সামনে রেখেই পুরো সংসদ ভবনে ছিলো উৎসবের আমেজ। এরমধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্মারক বক্তৃতা করেন।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশন কক্ষে আসন নিয়েই উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানিয়ে স্পিকার বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সংসদের এই বিশেষ অধিবেশন। এসময় তিনি কবি শামসুর রাহমানের ‘ধন্য সেই পুরুষ’ কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘ধন্য সেই পুরুষ, নদীর সাঁতার পানি থেকে যে উঠে আসে/ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে;—-জীবিতের চেয়েও অধিক জীবিত তুমি।’
রাষ্ট্রপতির ভাষণ শেষ হলে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান দেন সংসদ সদস্যরা। পরে ১৫ মিনিটের বিরতি শেষে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের উপর আলোচনার জন্য ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই প্রস্তাবটি নিয়ে সংসদে আলোচনা করবেন সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা। টানা চার দিন আলোচনা শেষে আগামী বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে গ্রহণ করা হবে।
ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘সংসদের অভিমত এই যে, ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপতি, বাঙালির অবিসংবাদিত মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেছেন। কিন্ত অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপস করেননি।১৯৪৭-৪৮ থেকে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, ১৯৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন – দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১ এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে বজ্র কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার নিরস্ত্র জনগণ ঘরে ঘরে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে দূর্গ গড়ে তুলেছিল। ২৬ মার্চ ১৯৭১ এর প্রথম প্রহরে জাতির পিতা শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ মহান শহীদ ও ২ লক্ষ মা বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান লাভ করে। বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। লাল সবুজের পতাকা ও সংবিধান। বঙ্গবন্ধু বিশ্বসভায় বাঙালিকে আত্মপরিচয় নিয়ে গর্বিত জাতিরূপে মাথা উঁচু করে চলার ক্ষেত্র রচনা করেছেন। স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার জন্য মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন তিনি। সেই সময়কালে বাংলাদেশের উন্নয়নের সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন তিনি। ২০২০ সালে জন্মশত বার্ষিকীতে মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক এবং কর্মময় জীবন ও দর্শনের ওপর জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হউক।’
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে (মুজিববর্ষ-২০২০) স্মরণীয় করে রাখতে গত রোববার থেকে সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে। অধিবেশনকে ঘিরে সংসদ ভবন এলাকা ছিলো কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখিয়ে সংসদে প্রবেশ করেন সংসদ সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা। অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবনকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়।