সংসদ প্রতিবেদক:
সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হলেও তার আদর্শ ও কর্মের মৃত্যু কখনো বাংলাদেশে হবে না। জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক শক্তিশালী। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনিরা ইতিহাস বিকৃতি শুরু করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধুর নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করতো না। ইতিহাসকে কেউ চাপা দিয়ে রাখতে পারে না, ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতে চলে। বুধবার রাতে মুজিববর্ষের বিশেষ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ওপর আনিত সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিল্প মন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন, এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইমলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেস্টা সালমান ফজলুর রহমান, মৃনাল কান্তি দাশ, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ,
শেখ সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনিরা ইনডেমনিটি দিয়েছিল। মোস্তাক ইনডেমনিটি দিল জিয়া সেটাকে সংসদে পাস করে নিল। ইনডেমনিটি দিল নিজেদের রক্ষা করার জন্য। জিয়া-মোস্তাক বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ইতিহাস বিকৃতি শুরু করেছিল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু আমাদের আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু বাঙালির মণিকোঠায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হতে পারে, তার কর্মের এবং আদর্শের মৃত্যু কখনো বাংলাদেশে হবে না।
নিজের জীবনের চেয়েও বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে বেশি ভালোবাসতেন মন্তব্য করে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু ৪ হাজার ৬শ’ ৮২ দিন কারাগারে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের চেয়ে বাংলাকে, বাঙালিকে বেশি ভালোবাসতেন। যখনই তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন তখনই তিনি বাংলার মাটি ও মানুষের কথা চিন্তা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে বন্দি থাকার সময় জেলের মধ্যে তার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, মৃত্যুকে আমি ভয় পাই। তোমরা শুধু আমার লাশ বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও। শেখ সেলিম আরও বলেন, এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম; প্রতি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি অত্যাচার-নির্যাতন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। ৬ দফা দেওয়ার পর তিনি যেখানে বক্তৃতা দিয়েছেন সেখানেই গ্রেফতার হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পরিপূর্ণ নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন আমার কিছু হবে না, আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তখন ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে ভারতে ব্যাপক আন্দোলন চলছিল।
শেখ সেলিম আরও বলেন, একদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ফণিভূষণ মজুমদার বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করে বলেছিলেন আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এটা কি আপনি জানেন? তখন বঙ্গবন্ধু ফণিভূষণ মজুমদারের কাঁধে হাত দিয়ে বলেছিলেন দাদা আমার কিছু হবে না। আমি চিলির আয়েন্দের (সালভাদর আয়েন্দে) মতো হব না।
শেখ সেলিম আরও বলেন, ১৯৯৯ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তখন রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে আন্তর্জাতিক ভাষা করার জন্য জাতিসংঘের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং জাতিসংঘ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের ১৯১টি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। অন্যদিকে জিয়াউর রহমান এবং অন্যরা ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতার স্লোগান জয় বাংলাকে বাদ দিয়ে জিন্দাবাদ আরম্ভ করল। এমনকি জাতীয় সঙ্গীতও পরিবর্তন করার চেষ্টা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৫ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট করার কাজ শুরু করেছিল, খুনি চক্র খালেদা জিয়ারা ক্ষমতায় এসে ওটাকেও বন্ধ করে দিল। তারপর এইবার ক্ষমতায় এসে ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। বিশ্বে আর কোনো দেশ ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে বলে আমার জানা নাই। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যে তার ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ বঙ্গবন্ধু বিশ্ব দরবারে পরিচিত করেছে। বাংলা ভাষা আজ বিশ্ববাসীর কাছে সমাদৃত ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।
বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রাতের খাবার:
মুজিববর্ষের বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদে বিশেষ খাবার বিতরণ করা হয়েছে। রাতের খাবার হিসেবে বুধবার এগুলো বিতরণ করা হয়। সংসদের বিশেষ অধিবেশনের বুধবারের বৈঠকটি অনেক রাত পর্যন্ত চলার কারনে এসব খাবার বিতরণ করা হয়। এমপি থেকে শুরু করে সেখানে দায়িত্বরত সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সন্ধ্যা ৬টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। এটি চলমান একাদশ সংসদের দশম অধিবেশন। আজ বৃহস্পতিবার বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।