সংসদ প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়, তবে নির্বাচনে কাজ করে না এজেন্ট দেয় না। করোনা ভাইরাস এরই মধ্যে কোন কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ কয়েকটি বাসে আগুন দেয়া হলো। মাঝপথে নির্বাচন বয়কট করে বাসে আগুন দিয়ে বিএনপি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃস্টি করতে চায়। রোববার রাতে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল দেশকে স্বাধীন করার। সে স্বপ্ন তিনি বাস্তবায়ন করার পর একটি মহল নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা কর্মিকে হত্যা করেছিল। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য। জাতির পিতা যখন বাকশাল গঠন করেছিলেন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন করার জন্য। অথচ এর সমালোচনা করে তার বিরুদ্ধে বিষেদগার করা হয়েছিল। ৭৫ সালে ২৬ মার্চ ভাষনে তিনি বলেছিলেন ভিক্ষুক জাতির কোন ইজ্জত নেই। আমি কোন ভিক্ষুক জাতির নেতা হতে চাই না। এজন্যই তিনি দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করতে কাজ শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি বলেছিলেন ঘুনে ধরা সিস্টেম দুর্নীতি কমায় না তাই সিস্টেম বদলাতে হবে এবং জনগনকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। তিনি যেটা চেয়েছিলেন ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সবাইকে কাজ করতে হবে। তিনি ৬৫ হাজার গ্রামে সমবায় সমিতি করতে চেয়েছিলেন। তিনি যে কাজটি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল বলেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের বাইরে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশের উন্নয়নে তেমন কোন কাজ করেনি। আমরা ক্ষমতায় এসে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছি। যেটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। আমাদের নির্বাচনী সিস্টেমেরও পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন তিনি। যাতে অস্ত্র বা টাকার প্রভাবে কেউ নির্বাচিত হতে না পারে।
একটা মানুষ তার জীবনের সব কিছু ত্যাগ করে দু:খি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। তার সেই স্বপআন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। বাংলেেদশ এখন আর বিদেশে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে চলে না। স্বাক্ষরতার হার আমারা বাড়িয়েছি।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস এর কারনে আমাদের প্রচেস্টায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা প্রনোদনা দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা সচল রাখছি। ভ্যাকসিন কেনার জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। তাহলে আমাদের দোষটা কোথায়।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংসদে উপস্থিত থেকে বক্তব্য শোনার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আসুন সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষনের পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংসদে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষন সংসদে সম্প্রচার করা হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রোববার আলোচনায় আরো অংশ নেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, বিরোধী দলীয় উপ নেতা জিএম কাদের, চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী, সরকারী দলের ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, অধ্যাপক আলী আশরাফ, ওয়াসিকা আয়েশা খান মুহাম্মদ শফিকুর রহমান এবং বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের ও জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী দেশ ও জনগণের জন্য বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, সামরিক শাসন আমলে প্রবর্তিত ফাস্ট লেডি না হয়েও বঙ্গমাতা আজীবন কাজ করেছেন। যুদ্ধে নির্যাতিত দুই লক্ষ মা বোনের পূনর্বাসনে নিরবে-নিভৃতে কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামে নানা ভাবে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, সোনার বাংলা গড়ার কাঠামো তৈরি করে গিয়েছিলেন। তাঁর যোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেই স্বপ্নের সাধ পাচ্ছি। ‘হেনরি কিস্ঞ্জিারের তলাবিহীন ঝুড়ি’ আর বাংলাদেশ নেই। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজ চলছে। বঙ্গবন্ধু আজ নেই কিন্তু তাঁর প্রতিচ্ছবি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে সফলতা লাভ করছি। তার নেতৃত্বে দ্রুতই দেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌছাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের একটিই মাত্র লক্ষ্য ছিল, তা হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। পাকিস্তানীরা চেয়েছিলো চিরদিন শোষণ-বৈষম্যের শৃঙ্খলে বাঙ্গালীকে বন্দী রাখবে। কিন্তু বাঙালি জাতিকে শোষণ-বঞ্চণা, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতেই ছিলেন আপোষহীন।
সংসদীয় গণতন্ত্রে বঙ্গবন্ধু এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন বলে উল্লেখ করেন চীফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু খুব স্বল্প সময়ে অত্যান্ত দক্ষতা ও দূরদর্শীতা পরিচয় দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর দ্রুত স্বীকৃতি আদায় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভূক্ত করতে সচেষ্ট হন। তিনি খুবই স্বল্প সময়ে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছেন। কোন রকম বাড়তি ট্যাক্স আরোপ না করে একটি নতুন বাজেট প্রণয়ন করেন। সুনির্দ্দিষ্ট উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা করে তার বাস্তবায়ন শুরু করেন।
জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু’ নামে একটি প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বাসসকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এ প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্যাভিলিয়নে বসে বিশাল পর্দায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের পুরো ভাষণটি প্রত্যক্ষ করেন।’ প্রধানমন্ত্রী প্যাভিলিয়নটি ঘুরে দেখেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।