নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০৩০ সালের মধ্যে সারাদেশে সবার জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা (সেফলি ম্যানেজড স্যানিটেশন) অর্জনে বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সমন্বিত সহযোগিতা কামনা করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ১৯ নভেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বিল অ্যান্ড মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে স্থাপিত সিটিওয়াইড ইনক্লুসিভ স্যানিটেশন সাপোর্ট সেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বাংলাদেশে সব উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সার্বিক, কারিগরি ও আর্থিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাণিজ্যিকভাবে সৃষ্ট দূষণ ও আবর্জনা মোকাবিলা এবং এসডিজি-২০৩০ ও রূপকল্প ২০৪১ লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের আরো আর্থিক-কারিগরি সহায়তা পেলে সুষ্ঠুভাবে একাজ সম্পন্ন করা সহজ হবে। মন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ফলে আবাসিক, বাণিজ্যিকভাবে সৃষ্ট কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি হয়ে পড়েছে। এসময় কঠিন ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গৃহীত কার্যক্রমের প্রশংসা করেন তিনি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
বিল এন্ড মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কর্তৃক সিডব্লিউআইএস-এফএসএম সাপোর্ট সেল-এর স্থাপনসহ পরিচালনায় সার্বিক সহযোগীতার জন্য বিল এন্ড মিলিন্ড গেটস ফাউন্ডেশনকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিরা বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তারা স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাথে সারাদেশে নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা (সেইফলি ম্যানেজড স্যানিটেশন) অর্জনে তাদের সার্বিক সহযোগীতা প্রদানে অঙ্গীকার করেন।
উল্লেখ্য, সরকার কর্তৃক প্রণিত ইনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক অফ ফেসাল স্ল্যাগ ম্যানেজমেন্ট বাস্তবায়নের জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আওতায় এই সেলটি স্থাপন করা হয়েছে। কঠিন ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহন, উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, স্টেক হোল্ডারদের সক্ষমতা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ এ সংশ্লিষ্ট পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সেল সার্বিক সহযোগিতা করবে।
নিরাপদ পানি সরবরাহের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়ণের দায়িত্ব অর্পন করে ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। পরবর্তীতে ১৯৪৫ সালে এর সাথে যুক্ত করা হয় স্যানিটেশন সেবা প্রদানের দায়িত্ব। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের অব্যহিত পরে সরকার প্রথমেই ধ্বংসপ্রাপ্ত পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন পদ্ধতি গুলোর পুনর্বাসনের গুরুত্বারোপ এবং তৎপরবর্তীতে নতুন অবকাঠামো স্থাপন শুরু করে ডিপিএইচই’র মাধ্যমে। একই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ওয়াসার আওতাধীন এলাকা ব্যতীত (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা ) সমগ্রদেশের নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যাবস্থা নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব এ অধিদপ্তরের উপর ন্যাস্ত। জনসাধারনের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখে। জনগণের নিকট নিরাপদ পানি ওস্যানিটেশন সুবিধা পৌছানোর লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এরই ফলশ্রুতিতে বায়লাদেশ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন কভারেজের দিক দিয়ে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। পল্লী এলাকার বিভিন্ন ধরনের নিরাপদ পানির উৎস (টিউবওয়েল) ও স্যানিটারী লেট্রিন স্থাপনাগুলোর রক্ষণাবেক্ষন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এর প্রধান দায়িত্ব।
তাছাড়া অত্র অধিদপ্তর পল্লী পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন অবকাঠামো নির্মানোত্তোর রক্ষণাবেক্ষণে ইউনিয়ন পরিষদকে কারিগরী সহায়তা প্রদান, স্বাস্থ্য পরিচর্যা জোরদারকরণ এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে থাকে। দ্রুত নগরায়নের ফলে পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন চাহিদা উত্তরউত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ চাহিদা পুরণে অত্র দপ্তর পৌরসভা সমূহের পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন অবকাঠামো নির্মাণ সহ কারিগরী সহায়তার আওতায় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে সহায়তা করছে। এছাড়া বন্যা , সাইক্লোন, মহামারী ইত্যাদির কারনে সৃষ্ট জরুরী পরিস্থিতিতে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সচল রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।