ইতিহাসের মহানায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আত্মপ্রকাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

এম মামুন হোসেন:
‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ’। ‘দুর্মর’ কবিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্যের এই বাংলাদেশ ‘জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ এই বাংলাদেশের আরেকটি পরিচয় হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আহমদ ছফা তাঁর ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ প্রবন্ধে তাই যথার্থ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ, একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিত পূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে।’ ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের অজপাড়া গাঁ টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া এক শিশু। মা বাবা আদর করে তাকে ডাকেন ‘খোকা’। ছোট্ট শিশু খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে যে ইতিহাস এর পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে তাঁর অদম্য নেতৃত্ব আর ত্যাগ। দেশের জন্য, মানুষের জন্য, একজন মানুষ কিভাবে কতখানি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন, জীবনে ঝুঁকি নিতে পারেন, জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করতে পারেন। জীবনের সুখ-স্বস্তি, আরাম, আয়েশ, মোহ, ধনদৌলত, সবকিছু ত্যাগ করার এক মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি একটি দেশ ও একটি জাতির ইতিহাস। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। আর তাই তো কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে নন অ্যালাইন্ড সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কোলাকুলি করার সময় বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখি নাই, কিন্তু আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় তিনি হিমালয়সম। আর এভাবেই আমার হিমালয় দর্শন।’

বাঙলা, বাঙালির কৃষ্টি এবং ইতিহাস রক্ষায় সবার আগে যিনি আন্দোলনে নেমেছেন, তিনি হলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধীকার আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে, বাঙালি জাতিকে দিয়েছেন স্বাধীনতা। বাঙালি জাতিকে বীর হিসেবে বিশ্বে দিয়েছেন অনন্য মর্যাদা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামে বিশ্বে এক রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন। বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন সফল করেছেন বাংলার মানুষের মুক্তির মহানায়ক। বিবিসি বাংলা বিভাগের জরিপে বঙ্গবন্ধুকে শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলা হয়। ১৯৭০ সালেই ৭ কোটি বাঙালি সেই রায় দিয়ে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার বন্ধু নন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বিবিসি বঙ্গবন্ধুকে পুনঃ আবিষ্কার করেছে মাত্র। ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট (১৯৭২ সালের এক সাক্ষাৎকারে) বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনার শক্তি কোথায়? তিনি অপকটে সে প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি’। তিনি আবারো জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার দুর্বল দিকটা কী? বঙ্গবন্ধু সেই প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি’। বঙ্গবন্ধু বলতেন, তার প্রধান গুণ এই যে, নিজের দেশের মানুষকে তিনি ভালোবাসেন, আর তার প্রধান দুর্বলতা এই যে, তিনি তাদের বড় বেশি ভালোবাসেন।

বঙ্গবন্ধুর সারাটা জীবন শুধু সাধারণ গরীব মানুষের কল্যাণ চেয়ে নিজের সব চাওয়া পাওয়া বিসর্জন দিয়েছেন। বাঙালি জাতির ইতিহাসের মহানায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আত্মপ্রকাশ ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে। এই দিকটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে খুব কম। সেই সময়ের টগবগে তরুণ শেখ মুজিবের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদই তাকে বাঙালীর মুক্তির ভবিষ্যৎ নেতা বানিয়েছে। যেসব বরেণ্য ব্যক্তির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, তাদের মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ বিএ ডিগ্রি গ্রহণ করে ১৯৪৭ সালে ঢাকায় চলে আসেন। পিতা লুৎফর রহমানের ইচ্ছা ছিল পুত্র শেখ মুজিব আইনজীবী হোক। পিতার ইচ্ছা পূরণের জন্য তিনি সে বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। সে সময় আইন বিভাগের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক এম ইউ সিদ্দিক। ভর্তির সময় তিনি তাঁকে নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁর রোল নম্বর ছিল-১৬৬। আইনের ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন এসএম হলের সংযুক্ত ছাত্র হলেও তিনি থাকতেন পুরান ঢাকার মোগলটুলিতে। একটি সাইকেলে চড়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেন। আড্ডা দিতেন ফজলুল হক হলের পুকুর পাড়ে। সেখানেই তিনি সমকালীন রাজনীতি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করতেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের দুর্দশা দেখে তিনি স্থির থাকতে পারতেন না। এ সময়ে তার মধ্যে অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। অন্যায়ের প্রতি তিনি হয়ে ওঠেন আপসহীন সংগ্রামী।

১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দান এবং ভীষণভাবে তাদের পক্ষে অবস্থান নেন। তখন চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারীদের কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হতো না। মুখের কথায় চাকরি হতো। আবার মুখের কথায় চাকরি চলে যেত। তাদের দৈনন্দিন কাজের কোনো সময়সূচি ছিল না। তাদের কোনো বাসস্থান ছিল না। যখন-তখন কাজের জন্য ডাকা হতো। যে কোনো কাজ করতে তাদের বাধ্য করা হতো। তাদের সাথে কৃতদাসের মতো ব্যবহার করা হতো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্ররা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে।

চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ঐ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে তাকে এবং আরো চারজনকে ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তখন তিনি আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ণরত ছিলেন। বহিস্কারের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, ১৫ রুপি জরিমানা এবং পরিবারের মাধ্যমে মুচলেকা দিয়ে তাঁরা ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে। শেখ মুজিব ছাড়া অন্য চারজন ছিলেন কল্যাণ চন্দ্র দাশগুপ্ত, নাঈমউদ্দিন আহমেদ, নাদেরা বেগম এবং আবদুল ওয়াদুদ। তাঁরা সবাই জরিমানা এবং মুচলেকা দিলেও বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করতে রাজী হননি। এরপর বঙ্গবন্ধুর আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে ২৭ এপ্রিল দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট পালন করা হয়। পুলিশ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। জেলে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসব। তবে ছাত্রনেতা হিসেবে নয়, একজন দেশকর্মী হিসেবে।’ মাত্র আড়াই বছর পর বঙ্গবন্ধু আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক কর্মী সমাবেশে আসেন। তবে এবার আসেন একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে। যিনি বঞ্চিত ও শোষিত বাঙালির আলোর দিশা হয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও গ্রেফতার হয়ে বঙ্গবন্ধু যখন জেলে ছিলেন, তখন ২৩ জুন রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগ আত্মপ্রকাশ ঘটে। বঙ্গবন্ধুকে ওই দলের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। জেলে আটক থাকার সময় একটি বড় দলের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হওয়া ছিল তার প্রতি বিশাল আস্থা। এরপর তিনি ধীরে ধীরে নিজ যোগ্যতায় জাতীয় নেতায় পরিণত হন তিনি। ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক প্রতিটি আন্দোলনের পেছনে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে ছিলেন। তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। অথচ বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবন শেষ করতে পারেন নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

দীর্ঘ ৬১ বছর পর ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় কর্তৃপক্ষ। বহিস্কার করার ক্ষেত্রে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মনীতি মানেন নি বলেই নথিপত্র দেখে সিন্ডিকেট সদস্যদের মনে হয়েছে। এ ধরনের বহিস্কারাদেশ দেওয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের লক্ষ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ছাত্রত্ব বাতিলের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্যে বঙ্গবন্ধু নিজে কখনো আবেদন করেন নি, এমনকি তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরও। ৬১ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের কোন ব্যবহারিক মূল্য হয়তো নেই। একটি ভুল সংশোধন করার মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যা অনেক আগেই প্রত্যাহার করা উচিত ছিল।

জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়েই শেখ মুজিবের জীবনে বারবার এই দুঃসহ নিঃসঙ্গ কারাজীবন নেমে আসে। তবে তিনি কখনো আপোস করেন নাই। ফাঁসির দড়িকেও ভয় করেন নাই। তাঁর জীবনে জনগণই ছিল অন্তঃপ্রাণ। মানুষের দুঃখে তার মন কাঁদত। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন, সোনার বাংলা গড়বেনÑএমনটাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত। বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছেন, ‘একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তন সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’
পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে তিনি ১৮বার জেলে গেছেন। মোট সাড়ে ১১ বছর জেলে কাটিয়েছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন অন্তত দু’বার। কিন্তু অসম্ভব বিনয় ছিল কথাবর্তায়, চালচলনে। অপরাপর নেতাদের কখনো অসম্মান করেননি। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ভাষায়, ‘এত বড় যোদ্ধা একজন মানুষ, কিন্তু কী বিনয় ছিল কথাবার্তায়, চালচলনে! আইয়ুব-ভুট্টো-ইয়াহিয়ার নামের শেষে ‘সাহেব’ জুড়ে দিতেন। বলতেন, ইয়াহিয়া সাহেব, এত অহংকারী হবেন না। এই সাহেব ডাকে কিছুটা কৌতুক ছিল, ঠাট্টা ছিল, কিন্তু সৌজন্যও ছিল। তাঁর ভাষা ছিল শাণিত, ইস্পাতের ফলার মতো। কিন্তু মার্জিত। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, একটা সৌজন্যবোধ তিনি তাকে দেখাতেন।’

১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে পলাশীর আম্রকাননে বাঙলীর স্বাধীনতার যেই সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পরাধীন বাঙালীদের মুক্তির সনদ পাঠ করেছিলেন শেখ মুজিব। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও শিশু পার্কের যে জায়গায় এখন গাছে গাছে সবুজ কুঁড়ি উঁকি দিচ্ছে, একাত্তরে সেখানেই অঙ্কুরিত হয়ছিল আজকের বাংলাদেশের বীজ। তারিখটি ছিল ৭ মার্চ। সোয়া তিনটায় হাজির হয়েছিলেন সাদা পাঞ্জাবি আর কালো কোর্ট পরা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। লাখো বাঙালির সমাবেশে অলিখিত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ রমনার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু সেদিন মাত্র ১৯ মিনিটের এ ভাষণেই সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রাণের কথা বলে দিয়েছিলেন। অকুতোভয় বাঙালিরা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা রেসকোর্সের এ মাঠেই আত্মসমর্পণ করে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো)। বিশ্ব ঐতিহ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আন্তর্জাতিক তালিকা মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড-এ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে স্থান দেয়া হয়েছে।

পৃথিবীতে কিছু রাজনীতিবিদ আছেন যাদের নামের সঙ্গে তার দেশ একাত্ম হয়ে আছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলা, চীনে মাও সেতুং, রাশিয়ায় লেনিন, ভিয়েতনামে হো চি মিন, তুরস্কে কামাল আতাতুর্ক, যুগোশ্লাভিয়ায় মার্শাল টিটো আর বাংলাদেশে শেখ মুজিব। এসব দেশের নাম আসলে অবধারিতভাবেই এসব ব্যক্তির নামও আসে। এসব ব্যক্তির দীর্ঘ সংগ্রাম ও বিপ্লব, ত্যাগ এবং আপসহীন মানসিকতার কারণেই পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নিয়েছে দেশগুলো। মৌলিক জায়গায় মিল থাকলেও বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের ব্যপ্তি ও বৈশিষ্ট স্বতন্ত্র। এই স্বতন্ত্রতার কারণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন। সবশেষ তারুণ্যের প্রতিনিধি হিসেবে বলবো, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, একটি দেশ, বাঙালি জাতীয়তার একটি মহাকাব্য, একটি আন্দোলন’।

লেখক: সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *