রফিকুল ইসলাম সবুজ:
বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয় বার সরকার গঠনের পর এক যুগ পূর্ণ হচ্ছে ৭ জানুয়ারী। দেশকে নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে সামনে এগিয়ে নিতে তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসে ধারাবাহিক ভাবে বিশাল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে একযুগে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন শেখ হাসিনা। গড়েছেন উন্নয়নের রেকর্ড। টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগের দুই বছরের শাসনামলে সাফল্যের পাল্লা ভারী হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতাও তুচ্ছ করে দেখার মতো নয়। নানা দুর্বলতায় বিএনপি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় রাজনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা না থাকলেও করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আলোচিত দূর্নীতি সরকারকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেললেও সফলতার সাথে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার মাধ্যমে মানুষের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার চেস্টা করে সরকার।
মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে এখনো কোন বিতর্ক তৈরি হয়নি। দীর্ঘ দিনের মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে নতুনদের সুযোগ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী প্রশংসিত হয়েছেন। তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে সরকার জনস্বার্থে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদেও দুই বছরে সবচেয়ে বড় সাফল্য দূর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান এবং বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে কঠোরতার সঙ্গে পরিচালিত অভিযানে গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে নদী তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবনসহ সব ধরনের স্থাপনা। একই সঙ্গে নদীর নাব্যতা ফেরাতেও চলছে খনন কাজ। এই উচ্ছেদ অভিযান সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। একই ভাবে সাড়া ফেলেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযান।
বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিয়ে ভূমি সেক্টরে জনদুর্ভোগ কমাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। জরুরি সেবা প্রদানের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে হট লাইন স্থাপন, অনলাইনে খতিয়ান সেবা চালু, ই-নামজারি কার্যক্রম চালুকরাসহ অন্যান্য ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে সফল হয় ভুমি মন্ত্রনালয়। বহির্বিশ্বে এক বছরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও বেড়েছে। নির্বাচন, গণতন্ত্র ও সুশাসন নিয়ে মতভেদ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। ভারত ও চীনের সঙ্গেও সখ্য বেড়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারিতে গত এক বছরে বিশ্ব ব্যবস্থা টালমাটাল। করোনায় প্রভাবিত উন্নয়ন, অর্থনীতি এমনকি রাজনৈতিক পরিস্থিতিও। অথচ করোনার মধ্যেও রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও দারুণ গতিতে আসছে রেমিট্যান্স। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন রেমিট্যান্স প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। আনন্দের বার্তা আসছে রিজার্ভের ক্ষেত্রেও। এ দুটি সূচক নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতির উন্নততর অবস্থান নির্দেশ করে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যাওয়ার গল্প বুনছে বাংলাদেশ। আর এগিয়ে যাওয়ার গল্পের কারিগর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকেই মানছেন বিশ্লেষকরা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের জোট সরকারের যুগপূর্তি আসন্ন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে আওয়ামী লীগ। আগামী ৭ জানুয়ারি পূরণ হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের টানা এক যুগ। এ যুগপূর্তি আর বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে নানাভাবেই বিশ্লেষণ করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব আর কৌশলী অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ আজ নব-পরিচয়ে পরিচিতি পাচ্ছে। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে ইতিবাচক সূচক তুলে ধরছে বিশ্ব সংস্থাগুলোও।
অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। বিদেশিদের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ ছিল এক তলাবিহীন ঝুড়ি। আর এখন সমৃদ্ধ-স্বনির্ভর বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ। সারাবিশে^ বাংলাদেশ এখন এক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। যে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ, সেই পাকিস্তানই এখন আর্থ-সামাজিক প্রায় সব সূচকেই পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের চেয়ে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত স্বাধীনতা অর্জনের ৭৩ বছরে যে সফলতা অর্জন করতে পারেনি, বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে ৪৯ বছরে। স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতির যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। সে সময় প্রায় প্রতিটি সূচকেই এগিয়ে ছিল ভারত-পাকিস্তান। এখন এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটিই আমাদের স্বাধীনতার বড় অর্জন। যেকোনো দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ধরা হয় মানবসম্পদ উন্নয়ন। এক্ষেত্রেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ^ব্যাংকের ‘মানব উন্নয়ন সূচক, ২০২০’ প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৭৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে ৫২তম। সেখানে পাকিস্তান ৪১ পয়েন্ট নিয়ে ৩১তম স্থানে আছে। ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে ভারত ৫৯তম স্থানে থেকে অবশ্য এ সূচকে এগিয়ে আছে। তবে কোন দেশ কতটা এগিয়েছে, তা বোঝার আরেক সহজ উপায় হলো মাথাপিছু আয়। এক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের চেয়েই এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২০৬৪ ডলার। সেখানে পাকিস্তানের ১ হাজার ৬৪১ ডলার এবং ভারতের ১ হাজার ৮৯৫ ডলার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এসেছে৷ আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশের সম্ভাব্য মাথাপিছু জিডিপি চার শতাংশ বেড়ে হতে পারে এক হাজার ৮৮৮ ডলার৷ সেখানে ভারতের সম্ভাব্য মাথাপিছু জিডিপি ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ কমে হতে পারে এক হাজার ৮৭৭ ডলার৷ অর্থাৎ এই প্রথম মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ১১ ডলার এগিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রশংসায় বিশ্ব মহলও। বাংলাদেশ যে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, খোদ সেই দেশটিরই এক উন্নয়ন বিষয়ক আলোচক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উদ্দেশে বলেছেন, ‘অন্য কোনো দেশের উদাহরণ দিয়ে লাভ নেই, পাকিস্তানের উচিত প্রথমে বাংলাদেশ হওয়ার চেষ্টা করা। তা হতে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগবে।’
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বিস্ময়ের পাশাপাশি ঈর্ষাও প্রকাশ করছে ভারতের গণমাধ্যমগুলো। কলকাতার বাংলা দৈনিক ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন নিয়ে কখনো শিরোনাম করছে ‘শাহের উইপোকা বাংলাদেশ অর্থনীতিতে টপকাচ্ছে ভারতকে’, আবার কখনো বাংলাদেশ-চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ‘খয়রাতি’ বলে উল্লেখ করছে। যদিও এমন নেতিবাচক খবর প্রকাশ করে দুঃখ প্রকাশও করেছে দৈনিকটি। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রার সকল আলোচনার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই রাখছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এক রায়ে বাংলাদেশ নতুন প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পায়। তাদের মতে, ধারাবাহিক নেতৃত্বের ফলে আওয়ামী লীগ সরকার আজ যেমন পাকাপোক্ত অবস্থানে, তেমনি সরকার এবং দলের মধ্যে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা। সুদিনে সবাইকে পাশে নিয়ে আর দুর্দিনে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে বন্ধুর পথে এগিয়ে চলছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। একসময় যে বামপন্থি, ডানপন্থি নেতৃত্ব বা সংগঠন আওয়ামী লীগের বিরোধিতায় ছিল, তারা এ দলের জোটে বা বলয়ে ভিড়েছে শেখ হাসিনারই রাজনৈতিক বিচক্ষণতায়। ইস্পাতসম মনোবল আর শত চ্যালেঞ্জ পায়ে মাড়িয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে পরিচয় করিয়ে সামনে এগোচ্ছেন তিনি। চ্যালেঞ্জ নিয়েই যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করে চলছেন, তেমনি ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সমুদ্র সীমানার বিরোধেরও নিষ্পত্তি টেনেছেন শেখ হাসিনা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনো দেশকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়েও এমন সূচক এখন উদাহরণ হয়ে আসছে। ডিসেম্বর মাসে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অহেতুক অভিযোগ তুলে এ প্রকল্প থেকে পিছু হটে যাওয়া বিশ্ব ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে গোটা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্ব নেতারা যেমন বাংলাদেশকে বিশেষ স্বীকৃতি দিচ্ছেন, তেমনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলা এবং রোহিঙ্গা সংকট ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নেও শেখ হাসিনাকে আপসহীন নেতা হিসেবে মূল্যায়ন করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতিকরা।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘সুশাসন আর দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ তার লক্ষ্যে যেতে পারছে না। তবে সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে দৃশ্যমান উন্নয়ন তো লক্ষ্য করার মতো। গণতন্ত্র, ভোট ব্যবস্থা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন আছে, কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তায় মানুষের মাঝে উন্নয়নের সুবিধা মিলছে, তা তো অস্বীকার করা যাবে না। আর উন্নয়নকে টেকসই রূপ দিতে হলে গণতন্ত্র এবং সুশাসনকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠা দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের যে নয়া রূপ, তা শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতার কারণেই সম্ভব হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার অসীম সাহসিকতায় বাংলাদেশকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ যেভাবে উল্টো পথে হাঁটছিল, তার সম্পূর্ণ বিপরীতে তিনি দেশকে টেনে নিচ্ছেন। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। এই সরকারের এক যুগ পূর্তিতে তা আরও স্পষ্ট হবে।’ অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদও মনে করেন, বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া এক প্রকার বিস্ময়। তিনি বলেন, ‘সুশাসন এবং জবাবদিহি থাকলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রী যে পরিমাণ নিষ্ঠা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছেন, তা ঠিক অন্যদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। আর এটিই বাংলাদেশের জন্য দুঃখবোধের জায়গা।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা আপাতত ভালো। করোনাকালে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য অবশ্যই সাধারণ মানুষের কৃতিত্ব রয়েছে। কৃষক, প্রবাসী শ্রমিক, গার্মেন্ট শ্রমিকরা এই সময়ে আমাদের জন্য অধিক আশীর্বাদ হয়ে আসছে বলে মনে করি। গত এক যুগে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছে, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে অবশ্যই সুশাসনের দিকে নজর দিতে হবে।’
অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, স্বাধীনতার সময় তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। আমার বিশ^াস, সেই কিসিঞ্জার যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনিই এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে বিস্মিত হতেন। এখন আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করে বলতে পারি সেই তলাবিহীন ঝুড়ি আজ বিশে^র বিস্ময়, উন্নয়নের এক রোল মডেল। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময়ে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে পাকিস্তান এগিয়েছিল।
ক্ষুধা-দারিদ্র্যপীড়িত দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণ, যে বাংলাদেশে ঠিকমতো রাস্তাঘাট ছিল না, সে দেশ ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি টাকায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করে। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রসহ ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এভাবে খাত ধরে বললে স্বাধীনতার ৪৯ বছরে বাংলাদেশ সব খাতেই পাশর্^বর্তী অনেক দেশের তুলনায় ভালো অগ্রগতি করেছে। বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর এক দেশ।
আর্থিক ও সামাজিক সূচকে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে আরও কিছু সূচকের তুলনা করলে দেখা যায় আসলেই বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে সমৃদ্ধি পথে। শিশু মৃত্যুহার রোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবাক করার মতো উন্নতি করেছে। একটা সময় ছিল যখন দেশে চিকিৎসার অভাবে কিংবা জনসচেতনতার অভাবে শিশু মৃত্যুহার ছিল অত্যধিক। আর এখন তা ভারত-পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে। ভারতে প্রতি ১০০০ জনে ৩০, পাকিস্তানে ৫৮ ও বাংলাদেশে ২২ জন শিশু মৃত্যুহার। শিক্ষার হারের ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে এখন শিক্ষার হার ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ পাকিস্তানের ৫৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। শিক্ষার হারে অবশ্য বাংলাদেশ ভারতের থেকে পিছিয়ে। ভারতের শিক্ষার হার ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখন ১ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে গেছে অথচ পাকিস্তানে তা ২ দশমিক ১ শতাংশ। শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষে। যেখানে বাংলাদেশের রেটিং ৪ দশমিক ১, ভারতের ৫ দশমিক ৭ এবং সর্বশেষ পাকিস্তানের ৯ দশমিক ৭। জন্মনিয়ন্ত্রণ হারে বাংলাদেশ শীর্ষে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সূচক (২ দশমিক ০), ভারতের (২ দশমিক ২) এবং সর্বশেষ পাকিস্তানের (৩ দশমিক ৫)। গড় আয়ুর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ শীর্ষে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩, ভারতের ৬৯ দশমিক ৪ এবং পাকিস্তানের ৬৭ দশমিক ১ বছর। গ্রোস সেভিংস জিডিপির ক্ষেত্রে শীর্ষ দেশটির নাম বাংলাদেশ ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপর রয়েছে ভারত ৩১ দশমিক ১ শতাংশ এবং সবার শেষে পাকিস্তান ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা নাগরিকের এক্ষেত্রে তিন দেশের পরিস্থিতিতে খুব একটা বড় পার্থক্য নেই। দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা নাগরিক ভারতে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে সমান ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। তিনটি দেশের মধ্যে এখনও কেউই শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে পারেনি। তবে এক্ষেত্রে ভারত এগিয়ে। তাদের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের সূচক ৯৫ দশমিক ২ শতাংশ, বাংলাদেশ ৮৫ দশমিক ২ শতাংশ ও পাকিস্তান ৭১ দশমিক ১ শতাংশ।
করোনা মহামারি আঘাত হানার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় হয়েছিল ৪০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ওই বছরের রফতানি আয় ছিল মাত্র ২৩ বিলিয়ন ডলার আর ভারতের রফতানি আয় ৩১৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে, পাকিস্তানের মাত্র ১৩ বিলিয়ন ডলার আর ভারতের ৩৩০ বিলিয়ন ডলার। মুদ্রার বৈদেশিক বিনিময় হারে বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের মুদ্রা ৮৫ টাকায় এখন ১ ডলার পাওয়া যায় আর ওই ১ ডলার পেতে এখন পাকিস্তানে ১৫৮ রুপি লাগে।
সন্ত্রাসবাদ দমনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সফল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরসহ গত কয়েক বছরের সন্ত্রাসবাদ সূচক থেকে উঠে এসেছে এমন তথ্য। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের (আইইপি) বৈশি^ক সন্ত্রাসবাদ সূচক ২০২০ প্রকাশ করে। এতে ৩৩তম স্থানে অবস্থান বাংলাদেশের। প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর ৪ দশমিক ৯০৯। ৭ দশমিক ৫৪১ পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তান সাত, ৭ দশমিক ৩৫৩ পয়েন্ট নিয়ে ভারত আট, ৬ দশমিক ০৬৫ পয়েন্ট নিয়ে শ্রীলঙ্কা ২০, ৫ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে নেপাল ২৭ নম্বরে অবস্থান করছে।
উন্নত দেশ হতে কাজ চলছে ১০ মেগা প্রকল্পের : উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে এখন বাংলাদেশ। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। এরপর মধ্য আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ। এখন বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে উন্নত দেশ হওয়ার। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য রয়েছে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে নিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশকে উন্নত দেশের মহাসড়কে নিতে কাজ চলছে ১০টি মেগা প্রকল্পের।
পদ্মা সেতু প্রকল্প : সরকারের নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়ন করতে এ প্রকল্পটিতে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এটি এখন দৃশ্যমান স্বপ্নময় প্রকল্প। গত ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ৪১তম স্প্যানটি বসার মাধ্যমে পুরো পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের ডিসেম্বরেই পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র : দেশের সর্বোচ্চ ব্যয়ের প্রকল্প এটি। বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র : বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তৈরি হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে এর কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র : জাপান সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ ১ দশমিক ১-এর পাওয়ার প্লান্ট এবং ওপার্ট ফ্যাসিলিটিজের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। প্যাকেজ ১ দশমিক ২-এর আওতায় প্লান্ট এবং পোর্ট ফ্যাসিলিটিজের কাজ এখন পর্যন্ত ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ হয়েছে।
মেট্রোরেল প্রকল্প : জাপান সরকারের অর্থায়নে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীতে বাস্তবায়ন হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্প। প্রকল্পটির শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৩ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০১২ সালের জুলাই থেকে কাজ শুরু হয়। শেষ হবে ২০২৪ সালে।
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ : প্রকল্পটি বিল্ট ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির ১০ম সভায় গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পটিও যুক্ত করা হয়।
পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ : পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য এ প্রকল্পকে ১৯টি কম্পোন্যান্টে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি কম্পোন্যান্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে, ৬টি কম্পোন্যান্ট পিপিপির মাধ্যমে এবং ৬টি কম্পোন্যান্ট জি-টু-জি পদ্ধতির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ : চীন সরকারের অর্থায়নে জি-টু-জি পদ্ধতিতে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের শুরু থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ১৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা।
ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প : এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০১০ সালের জুলাই থেকে কাজ শুরু হয়েছে। মেয়াদ নির্ধারণ করা আছে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত।
কর্ণফুলী টানেল : এ ছাড়া চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প দুটির মোট নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে ১৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। সড়ক ও সেতু বিভাগ কর্ণফুলীর মোহনায় (বঙ্গোপসাগর ও নদীর মিলনস্থল) ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণ করছে। কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীর তথা আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা টানেলের মাধ্যমে মূল নগরের সঙ্গে যুক্ত হবে। চীনের সাংহাইয়ের আদলে গড়ে উঠবে দুই শহরের সমন্বয়ে একটি নগর। ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এই টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ৩৯তম শেখ হাসিনা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মর্যাদাপূর্ণ ম্যাগাজিন ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ৩৯তম স্থান অর্জন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ ডিসেম্বর ম্যাগাজিনটির ওয়েবসাইটে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড’স হান্ড্রেড মোস্ট পাওয়ারফুল উইমেন’ শীর্ষক এই তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল টানা ১০ বছর তালিকার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লেগার্ড। নবনির্বাচিত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন এবং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তালিকায় ৪৬তম স্থান পেয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রোফাইলে ফোর্বস বলেছে যে, শেখ হাসিনা দেশে সুসংহত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন। ম্যাগাজিনটি আরও লিখেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রী। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর অফিসে এটি তার চতুর্থ এবং টানা তৃতীয় মেয়াদ। তিনি তার চতুর্থ মেয়াদে খাদ্যনিরাপত্তা, শিক্ষায় প্রবেশাধিকার ও স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোনিবেশ করার পরিকল্পনা করেছেন।
প্রতিবেদক: দৈনিক সময়ের আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ও পার্লামেন্ট ভয়েস এর সম্পাদক ।