কলকাতা প্রতিনিধি:
যত ভোট এগিয়ে আসছে ক্রমশ বদলাচ্ছে বাংলার রাজনৈতিক ছবিটা! আগামী ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে বাংলা দখল করতে চায় বিজেপি। বিজেপি যে কোন ভাবেই হোকে একক সংখ্যাগরিষ্টতা পেতে মরিয়া। তারা তৃনমুল সাংসদদের দলে ভেড়াচ্ছে। ভোটের আগে তৃনমুলের অধিকাংশ সাংসদকে বিজেপিতে নেওয়ার কৌশল নিয়ে কাজ করছে তারা।
অন্যদিকে জোটের পথে আরও এক ধাপ এগোল বাম-কংগ্রেস। আগামী বিধানসভা ভোটে আসন সমঝোতা কি হবে তা ঠিক করতেই বৈঠকে বসেন বাম এবং কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসু এবং কংগ্রেসের তরফে এদিনের বৈঠকে প্রদীপ ভট্টাচার্য ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, আগামী ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে সমঝোতা করেই লড়বে কংগ্রেস। ইতিমধ্যে তা অনুমোদন করেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। গত বছরের শেষের দিকে কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও বামেরা জোট বেঁধে লড়ে ২৯৪টির মধ্যে ৭৬টি আসনে জেতে। দুজনে মিলে প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোট পায়। বামেরা এককভাবে মাত্র ৩২টি আসনে জেতে। তাদের ভোট শতাংশ ছিল ২৬ শতাংশ। কংগ্রেস পায় ৪৪টি আসন, মাত্র ১২ শতাংশ ভোট।
যদিও গত ৫ বছরে ক্রমশঃ শক্তি ক্ষয় হয়েছে বাম, কংগ্রেসের। তৃণমূলের বিরোধী হিসাবে পরিসর দখল করেছে বিজেপি। এই প্রেক্ষাপটে কার্যত অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েই ফের হাত মেলাতে চলেছে বাম, কংগ্রেস। ইতিমধ্যে সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। শুধু কংগ্রেসই নয়, গত অক্টোবরেই সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল ও আগ্রাসী মেজাজে বাড়তে থাকা বিজেপিকে রুখতে কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়া করবে বামেরা। গত নভেম্বরে অধীর ও অন্য রাজ্য নেতাদের সঙ্গে রাহুল গান্ধীর অনলাইন বৈঠকের পর কয়েকটি সূত্র জানায়, কংগ্রেসের অন্তর্র্বতী সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পর কংগ্রেস বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কথাবার্তা শুরু করবে। আর এরপরেই আজ রবিবার বৈঠকে বসলেন বাম এবং কংগ্রেসের আধিকারিকরা। মূলত এই বৈঠকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বাম এবং কংগ্রেস কোন কোন আসনে লড়বে তা নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। তবে সূত্রের খবর, যে যেখানে শক্তিশালী সেখানেই প্রার্থী দেবে বলে আগেই ঠিক ছিল। সম্ভবত সেভাবে আসন বিন্যাস করে দুপক্ষ লড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে অবশ্য বাম, কংগ্রেস আসন বোঝাপড়া মসৃণ তো হয়ইনি, উল্টে শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তেই যায়। দুপক্ষ বোঝাপড়ায় পৌঁছতে পারেননি। যদিও উত্তরবঙ্গে বাছাই করা কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট একজোট হওয়ার ফায়দা পায় কংগ্রেস।তারা ভাল সংখ্যক আসন পায়। গত লোকসভা ভোটে একটিও আসন জোটেনি বামেদের। কংগ্রেস মাত্র ২টি আসনে জেতে। ৩৯টিতে বামেদের জামানত জব্দ হয়। কংগ্রেসের ৩৮টি আসনে জামানত নষ্ট হয়। বিজেপি চমকপ্রদ সাফল্য দেখিয়ে ১৮টি আসনে জেতে, তৃণমূল পায় ২২টি আসন।
তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে হারানো
সম্ভব নয়: সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি
আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে হারানোই সিপিআইএমের (কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া-মার্কসবাদী) প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু যে রকম জনরোষ দেখা গিয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাতে তৃণমূলকে সঙ্গে নিলে বিজেপিকে হারানো সম্ভব হবে না। এমনই অভিমত প্রকাশ করেছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। কারণ, ওই পথে হাটতে গেলে উল্টো ফল হয়ে যাবে বিজেপির জয়ের পথ পরিষ্কার হবে। সে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, বিজেপিকে হারানোর প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জনের জন্যই তৃণমূলকে হারানো দরকার।
ইয়েচুরির বক্তব্য, কেন্দ্রের সরকারি ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বিজেপি দেশের সংসদ আদালত নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক সংস্থাগুলির ভূমিকা খর্ব করছে। এরই রেশ টেনে তিনি দেশকে বাঁচাতে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান জানান। সে কথা বলতে গিয়ে রাজ্যের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারানোটাই তার প্রাথমিক লক্ষ্য এবং প্রতিটি রাজ্যের বিজেপিকে হারানো দরকার বলে জানান। তবে কিভাবে হারানো যাবে সে কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইয়েচুরির বক্তব্য, একেকটি রাজ্যে এক এক রকম রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ফলে বিহারের মত বাংলাতে বিজেপি ছাড়া সকলে একজোট হলেই হবে তার নয় । তাঁর মতে , রাজনীতিটা পাটিগণিত নয় যে দুই আর দুইয়ে সব সময় চার হবে।
বাংলায় বিজেপির বাড়বাড়ন্ত মেনে নিয়েও তিনি উল্লেখ করেন, তৃণমূল বিজেপিকে নিয়ে এসেছ এবং কেন্দ্রে বিজেপির সঙ্গে সরকারে ছিল। তাছাড়া রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখন চাইছে এবার তৃণমূল হারুক। ফলে সেই তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি বিরোধী লড়াই করতে গেলে বিজেপির জয়ের রাস্তা সাফ হবে। এমন চিন্তা করলে উল্টো ফল দেবে। সেক্ষেত্রে বিকল্প কি হতে পারে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইয়েচুরি জানিয়েছেন, বিজেপি এবং তৃণমূল দুটি দলকে পরাস্ত করতে হবে। আগামি দিনে এই দুই পক্ষের ভিতর মেরুকরণ করতে মিডিয়াকে ব্যবহার করা হবে বলে তিনি জানান। তার মতে দেখানো হবে এই দুই পক্ষের মধ্যে নানা ইস্যুতে ঝগড়ার রয়েছে। বিজেপি এবং তৃণমূল দুয়ের বিকল্প হিসেবে বামপন্থীদের জোট বাঁধতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।