নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সফল হয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু। মাদক নির্মুলে চাকরিতে প্রবেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট (বিশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা) বাধ্যতামূলক করার দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরেই সোচ্চার রয়েছেন সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তিনি বার বার বিষয়টি উত্থাপনের পর কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চাকরিতে প্রবেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট (বিশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা) বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এর জন্য দেশজুড়ে ল্যাব (পরীক্ষাগার) বাসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ কাজের সমন্বয় ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) আদলে পৃথক সংস্থা গঠনের সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। কমিটির প্রস্তাব আমলে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। মাদকসংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ২০১৮ সালের আইনের সংশোধনী গত সংসদ অধিবেশনে পাস হয়েছে। এর আগে সংসদীয় কমিটির সুপারিশে মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারি চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৫৭টি ডিভিশনের শতাধিক পুলিশ সদস্যের নমুনা পরীক্ষার পর পজিটিভ হওয়া ৫০ জনের মাদক গ্রহণ ও কারবারে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাঁদের মধ্যে ২৬ জন পুলিশ সদস্যকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। দেশজুড়ে ডোপ টেস্ট কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারি চাকরিতে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। ডোপ টেস্ট করতে জেলা পর্যায়ে মিনিল্যাব বসানো হবে। প্রাথমিকভাবে ২১টি জেলায় এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এসব জেলায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে (ডিএনসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব বিষয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জানানো হয়েছে, চাকরির আগেই নয়, পরেও ডোপ টেস্ট করা হবে। এর জন্য একটি পৃথক ইনস্টিটিউট গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে সরকারি চাকরি ছাড়াও বেসরকারি চাকরি এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যালে ভর্তিপ্রত্যাশীদের ডোপ টেস্ট করানো হবে। সন্দেহভাজন যে কাউকে ডোপ টেস্ট করিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে সংস্থাটি।
এদিকে উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডোপটেস্ট বা বিশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিধান চালু করতে প্রায় ৬৩ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থ বছরেই এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ২৯ ডিসেম্বর কমিটির বৈঠকে মাদক বিরোধী অভিযান জোরদার করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, মো. হাবিবর রহমান, সামছুল আলম দুদু, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, মো. ফরিদুল হক খান, পীর ফজলুর রহমান, নূর মোহাম্মদ ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে মাদক নির্মূলে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে ডোপটেস্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুতই এটা শুরু হবে। এমনকি সরকারী চাকুরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ডোপটেস্টে উত্তীর্ণ হতে হবে। তিনি আরো বলেন, এই সকল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিএসটিআই’র আদলে একটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুপারিশ বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করেছে।
এদিকে কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্রে বলা হয়েছে, উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডোপটেস্ট পরীক্ষার বিধান রেখে ডোপটেস্ট বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া ‘মাদকাসক্ত সনাক্তকরণে ডোপটেস্ট প্রবর্তন’ শীর্ষক ৬২ কোটি ৮৩ লক্ষ ৪ হাজার টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যা পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো হয়। এরপর পরিকল্পনা কমিশন কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের পর্যবেক্ষণ মোতাবেক সংশোধিত ডিপিপি পাঠানোর কার্যক্রম চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডোপ টেস্ট চালু করা সম্ভব হবে। কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে মাদক মামলায় আটক ব্যক্তিগণ জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসা ও সরবরাহ করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া মাদক বিরোধী অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করে এই অভিযান আরো জোরদার করার তাগিদ দেওয়া হয়।