ধন্যবাদ প্রস্তাব গ্রহণ, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ২৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিট আলোচনা

সংসদ প্রতিবেদক:
একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশন সমাপ্ত হয়েছে। মঙ্গলবার অধিবেশন সমাপ্তির আগে সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদ কক্ষে রাষ্ট্রপতির গ্যালারি থেকে অধিবেশনের শেষ দিনের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৩২ জন সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ২৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিট আলোচনা করেন। এ অধিবেশনে মোট ছয়টি বিল পাস হয়। কার্যপ্রণালি-বিধির ৭১ বিধিতে ৪৬টি নোটিশ পাওয়া যায়, যার মধ্যে একটিও আলোচনায় আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য মোট ৮৪টি প্রশ্ন এসেছে অধিবেশনে, এর মধ্যে তিনি ২৮টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তর দেওয়ার জন্য মোট এক হাজার ৬৮৯টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, যার মধ্যে মন্ত্রীরা উত্তর দিয়েছেন ৮২০টির।
নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে নিয়ম অনুযায়ী ভাষণ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। ভাষনের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের সাধারণ আলোচনায় সরকারি দলের সদস্যরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ভূয়শী প্রশংসা করেন। আর বিএনপিসহ বিরোধী দলের সদস্যরা স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অনিয়মের অভিযোগ তোলেন।
মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশন সমাপ্তির বিষয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠের মধ্য দিয়ে অধিবেশনের ইতি টানেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অধিবেশন সমাপনীর আগে ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সামরিক অ্যাকাডেমির প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ সংসদে দেখানো হয়। ১২ কার্যদিবসের এই অধিবেশন শুরু হয় গত ১৮ জানুয়ারি। শুরুর দিন সংবিধানের বিধান অনুযায়ী সংসদে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে তার ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব আনেন প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।
সাধারণত বছরের প্রথম অধিবেশন দীর্ঘ হয়। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এই অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হয়েছে। সাধারণত কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশনের মেয়াদ ঠিক করা হলেও মহামারীর কারণে গত পাঁচটি অধিবেশনের আগে ওই কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। স্বাস্থ্যবিধির বিধিনিষেধের কারণে মহামারীকালের অন্য চারটি অধিবেশনের মত এবারও সীমিত সংখ্যক সংসদ সদস্য অংশ নেন। প্রথম দিন করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া সংসদ সদস্যরা অংশ নেন। এরপর প্রতি কার্যদিবসে সর্বোচ্চ ৯০ জনকে পর্যায়ক্রমে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অধিবেশন শুরুর দিন ছাড়া সংসদ সচিবালয়ের কর্মরতদেরও অধিবেশন চলার সময় সংসদ ভবনে প্রবেশ সীমিত ছিল। সুনির্দিষ্ট দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বাইরে কাউকে সংসদে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
সর্বশেষ মঙ্গলবার আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সরকারী দলের সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, আসলাম হোসেন সওদাগর, কাজী মনিরুল ইসলাম প্রমূখ।
আলোচনায় আমির হোসেন আমু বলেন, আজকে বিএনপি দেশের উন্নয়ন দেখে না, বিশ্ব যেখানে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলে। আমার দেশের বন্ধুরা যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল তারাই আজকে দল গঠন করে তাদের সাথে জোট গঠন করে, তাদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে। তিনি বলেন, ৯৬ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসার পর বিজয় মিছিল পর্যন্ত করিনি। তাদের গায়ে একটা ফুলের টোকা পর্যন্ত দেই নাই। একমাত্র ২০০১ সালে শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। এরপর তারা ক্ষমতায় আসার পর আমরা কি দেখলাম? তারা ভুলে গেল আমাদের আচার- আচরণ। সেই পাকিস্তানী কায়দায় আমাদের ৩৩ হাজার লোককে হত্যা করলো।
প্রবীণ নেতা আমীর হোসেন আমু বলেন, আজকে যখন তারা গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, আজকে যখন তারা এই সমস্ত কথা বলে। আজকে উন্নয়নের কথা না বলে শুধু সমালোচনা করে তখন মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, যারা এই দেশে রাজনীতি করতে চান, এই দেশের মনোভাবাপন্ন হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মনোভাবাপন্ন হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নিয়ে তাদের রাজনীতির ময়দানে আসতে হবে।
চিফ হুইপ নূর-ই আলম বলেন, দুর্নীতিতে যারা পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, তাদের মুখে দুর্নীতির অভিযোগ শুনলে হাসি পায়। নির্বাচনে তারা কী করেছে? বিএনপি নির্বাচনে প্রত্যেকটি আসনে একাধিক তৃণমুল নেতার কাছ থেকে টাকা নিয়ে লন্ডনে পাচার করে প্রার্থীকে আগেই পঙ্গু করে দিয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও তাই চলছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশবাসীকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email