ব্যারিস্টার মওদুদ সব সময় সরকারঘেঁষাই ছিলেন : প্রধানমন্ত্রী

সংসদ প্রতিবেদক:
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদ্য প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সম্পর্কেও কথা বলেন। তিনি তুলে ধরেন মওদুদ এর রাজনৈতিক জীবনের নানা দিক। স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকজন ভদ্রলোকের কথা বলতেই হয়, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি সব সময় একটু সরকারঘেঁষাই ছিলেন। ব্যারিষ্টারি পাস করে ১৯৬৯ সালে যখন বাংলাদেশে আসেন। তিনি কবি জসীমউদ্দিনের মেয়ের জামাই বলে সব সময় তার প্রতি একটা সহানুভূতি ছিল, কিন্তু তার কিছু কিছু কাজ একটু ভিন্নধরনের ছিল। যার কারণে তেয়াত্তর সালে তাকে একবার গ্রেফতার করা হয়। কারণ বাংলাদেশের কিছু গোপন তথ্য পাচার করছিলেন। তখন কবি জসীমউদ্দিন সাহেব এসেছিলেন আমাদের বাসায়। তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে অনুরোধ করলে তখন তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।’

‘ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী ছিলেন’- বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদের এমন বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বন্দি করা হয় তখন যে মামলা চলছিল, এখানে অবশ্য তার জীবনীতে (মওদুদ) লেখা আছে তিনি আইনজীবী ছিলেন। আসলে তিনি কোনও অ্যাপয়েনটেন্ড আইনজীবী ছিলেন না। তিনি ড. কামাল হোসেন সাহেব ও বঙ্গবন্ধুর পিএস মোহাম্মদ হানিফের সঙ্গেও ঘুরতেন। বিশেষ করে ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলামের সঙ্গে তার খুব ঘনিষ্টতা ছিল। ওই দুই জন সবসময় একসঙ্গেই চলতেন। তিনি বলেন, ‘আমার এখনও মনে আছে যখন আইয়ুব খান গোল টেবিল বৈঠক ডাকলো এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আগরতলা মামলায় বন্দি অবস্থায় প্যারোলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করা হলো। তখন আমার মা এ বিষয়ে খুব কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মামলা প্রত্যাহার করে মুক্ত মানুষ হিসেবে যেন তিনি যান। তিনি প্যারোলে যাবেন না। এই তথ্যটি আমি মায়ের কাছ থেকে নিয়ে আমার বাবাকে পৌঁছে দিয়েছিলাম। যেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল সেই ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে। সেখানে আমাদের অনেক নেতা তখন উপস্থিত ছিলেন। তাজউদ্দিন আহমদ, তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া, আমিরুল ইসলাম, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিষ্টার মওদুদসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল এবং সেটাই তারা বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমি যখন আমার মায়ের বার্তাটা পৌঁছে দেই, অবশ্য বঙ্গবন্ধু নিজেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাকে মুক্ত মানুষ না করলে তিনি যাবেন না।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘মায়ের বার্তাটা পৌঁছে বাসায় ফিরে আসার পর দোতলার বারান্দায় একা একা দাঁড়িয়ে আছি। আমিরুল ইসলাম ও মওদুদ আমার কাছে আসে। আমার কাছে এসে এ কথাই বলেছিল, এটা আমিরুল ইসলাম সাহেবই বলেছিলেন। আর মওদুদ তাকে সায় দিয়েছিলেন। বলেছিল যে- তুমি কেমন মেয়ে? তুমি চাও না তোমার বাবা কারাগার থেকে ফিরে আসুক? জবাবে আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ আমার বাবা সম্মান নিয়েই ফিরে আসবেন। আপনারা এ সমস্ত বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। মওদুদ মুখে যাই বলুক আবার তার লেখাগুলোর মধ্যে অনেক সময় অনেক কন্ট্রোভার্শিয়াল কথা নিজের আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তিনি লিখেছেন।’

ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ এর দল বদলের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় তিনি দল বদল করতে পছন্দ করতেন। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ আসলো, সেই ৬৯ সালে আমাদের সঙ্গে মিশে গেলো। পঁচাত্তরের পরে বিএনপিতে যোগ দিলো। তিনি সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি ছিলেন। জেনারেল এরশাদ সাহেব তাকে ক্ষমা করে দিয়ে আইনমন্ত্রী করলো। আবার তিনি বিএনপিতে যোগদান করলেন। রাজনীতিতে বার বার দল বদল তার অভ্যাস ছিল, এতে কোনও সন্দেহ নেই। তারপর বলবো, তিনি একটা ট্যালেন্টেড মানুষ ছিলেন। তার দেশপ্রেম কাজে লাগালে হয়তো দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন। তিনি আরো বলেন, তিনি মারা যাওয়ার পর আমি নিজে হাসনার (ব্যারিস্টার মওদুদের স্ত্রী) সঙ্গে কথা বলি। কারণ হাসনার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। তার সঙ্গে আমার শোক বার্তাও জানিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *