স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংসদ অধিবেশন শুরু, বৃহস্পতিবার বাজেট পেশ

সংসদ প্রতিবেদক
সাংবিধানিক বাধ্য-বাধকতার কারণে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কঠোর সতর্কতা মেনে জাতীয় সংসদের বাজেট (্ত্রয়োদশ) অধিবেশন শুরু হয়েছে। বুধবার বিকেল ৫ টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশন শোক প্রস্তাব গ্রহণ শেষে মূলতবি করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় অধিবেশনে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা শেষে আগামী ৩০ জুন বাজেট পাস হবে।

করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে অধিবেশনের আগে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হয়নি। কঠোর সতর্কতায় শুরু হওয়া এই অধিবেশনে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ স্বল্প সংখ্যক সংসদ সদস্য অংশ নেন। তবে সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ সিনিয়র সংসদ সদস্যরা অনুপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সংসদ সদস্যরা করোনা সতর্কতা মেনে অধিবেশন কক্ষে এক থেকে দু’টি আসন পর পর বসেছিলেন। অধিকাংশের মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও মাথায় ক্যাপ ছিলো। সংসদ পরিচালনায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সংসদ ভবনের প্রবেশমূখে সকলকেই জীবাণু নাশক ¯েপ্র করা হয়। এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের তাপমাত্রা মাপা হয়। এছাড়া নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

বুধবার অধিবেশনের শুরুতে সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন করেন স্পিকার। এবার অধিবেশনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন- শহীদুজ্জামান সরকার, এবি তাজুল ইসলাম, মাজহারুল হক প্রধান, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুমানা আলী। স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে এদের মধ্যে অগ্রবর্তীজন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন।

সভপতিমণ্ডলী মনোনয়নের পর স্পিকার শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। চলতি সংসদের সদস্য আবদুল মতিন খসরু ও মো. আসলামুল হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। সাবেক সংসদ সদস্য চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী, মেরাজ উদ্দিন মোল্লা, গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন, খোন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ, আবুল হাসেম, মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ ইউনুস, জিয়াউর রহমান খান, আব্দুল বারী সরদার, দিলদার হোসেন সেলিম, আব্দুর রউফ খান ও ফরিদা রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

এছাড়া ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, বাংলা একাডেমির সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান খান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের মা ফৌজিয়া মালেক, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সাহিদা আখতার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসান শাহরিয়ার, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক, লোকসংগীত শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, অভিনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম মহসীন, সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা হারুন-উর-রশিদ ও অভিনেতা ওয়াসিমের মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করেছে সংসদ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে যারা মারা গেছেন তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌ দুর্ঘটনা, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ভারত ও বাংলাদেশে হতাহতদের জন্যও শোক প্রকাশ করা হয়।

চলমান সংসদের কোনো আইনপ্রণেতা মারা গেলে সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে সংসদের বৈঠক মুলতবির রেওয়াজ রয়েছে। কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু গত ১১ মার্চ মারা যান। গত ৪ এপ্রিল ঢাকা-১৪ আসনের সদস্য আসলামুল হক মারা যান। একারনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সরকারি ও বিরোধী দলীয় সদস্যরা। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিতে শোক প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। এরপর প্রয়াতদের স্মরণে নিরাবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। এরপর দিনের অন্যান্য কার্যসূচী স্থগিত করে অধিবেশন মূলতবি করা হয়।

সংসদ সচিবালয় সুত্র জানায়, গতবারের বাজেট অধিবেশনের মতো এবারও তালিকা করে সংসদ সদস্যরা বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিটি কার্যদিবসে উপস্থিতি সংখ্যা ১০০ থেকে ১২০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে বলে একজন সংসদ সদস্য ৩ থেকে ৪ কার্যদিবস অধিবেশনে যোগ দেবেন। যোগদানের জন্য তাদের করোনাভাইরাস নেগেটিভ সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। একদিন কোভিড-১৯ টেস্টের নেগেটিভ ফলাফলের ভিত্তিতে পরপর দুই দিন অধিবেশনে যোগ দেওয়া যাবে। এজন্য আইন প্রণেতাদের একাধিকবার নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন পড়বে। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সংসদের হুইপের দপ্তর থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সংসদ সদস্যরা কে কোন দিন যোগ দেবেন। এবারও বয়স্ক ও অসুস্থ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

সংসদ চলাকালীন দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশও সীমিত করা হয়েছে এই অধিবেশনে। শুধু বাজেট পেশের দিন আজ করোনা নেগেটিভ সনদ দেখিয়ে সংসদ ভবনের সাংবাদিক লাউঞ্জে থাকতে পারবেন সাংবাদিকরা। সাধারণ সময় বাজেট পেশের দিনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সংসদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অবশ্য মহামারীর কারণে গত বছর বাজেট অধিবেশনও তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email