স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো, তোপের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সংসদ প্রতিবেদক
স্বাস্থ্যখাতের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং প্রথম আলোর সিনিয়র প্রতিবেদক সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার ঘটনায় সোমবার সংসদে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কেনাকাটায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো বলেও মন্তব্য করেন সংসদ সদস্যরা। তবে এ নিয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। এসব প্রসঙ্গ এড়িয়ে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সফলতা দেখিয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে।
সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট ও ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘যারা পুকুর চুরি করছেন, তারা বেরিয়ে যাচ্ছেন। যারা এসব প্রকাশ করছেন, তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জবাবদিহি নিশ্চিতে কাজ করে। সাংবাদিকদের এটুকু সুযোগ দেয়া সমাজের দায়িত্ব। বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘কেনাকাটায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো। কীভাবে এই মন্ত্রণালয়ের সংস্কার করবেন, তা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সুস্পষ্টভাবে জানাতে হবে। স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কথা বলতে বলতে তিনি বেহাল হয়ে গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগকে সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। বেহাল দশা থেকে রক্ষা করতে কমিটি গঠন করতে হবে।
জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের রওশন আরা মান্নান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আফজাল-মালেকরা অনিয়ম করছে রূপকথার গল্পের মতো। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এখন কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু তাদের থামানো যাচ্ছে না। এখানে অনেক মালেক, আফজালের ছড়াছড়ি। একজন মহিলা উপ-সচিবের কানাডাসহ তিনটা দেশে বাড়ি আছে। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার সমালোচনা করে রওশন আরা মান্নান প্রশ্ন রাখেন, ‘একজন নারী সাংবাদিক অন্যায় করলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে দেওয়া হলো না কেন? কেন তাকে ৬ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হলো? আইন কেন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হলো, নিজেরা কেন অত্যাচার করলো, দেশবাসী এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা করছেন।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আপনি একজন সজ্জন ব্যক্তি। আপনার বাবা আমার সঙ্গে মন্ত্রী ছিলেন। আপনাকে আমি চিনি। অত্যন্ত ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে আপনি। কিন্তু আপনার তো কর্তৃত্ব নেই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, চুরি-ডাকাতি করলে একজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা যায়। কিন্তু আইন কেন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হলো, এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, রোজিনা ইসলামকে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হলো। তাকে টয়লেটে যেতে দেননি। অসুস্থ মানুষ, তাও মহিলা। তাকে এভাবে হেনস্তা করা যায়? এটা নিয়ে জাতিসংঘ, সারা পৃথিবী কথা বললো। আমাদের মুখটা কোথায় গেলো? নিজেদের দুর্বলতা নিজেদের ঢাকতে হয়।
তবে সংসদ সদস্যদের এসব প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, স্বাস্থ্যসেবা একটি ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দেড় বছর ধরে করোনা চলছে। তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধের কোনও ঘাটতি হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email