সাজা মওকুফে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা চাইতে হবে : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
খালেদা জিয়াকে একমাত্র রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা করে মুক্তি দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে এজন্য খালেদা জিয়াকে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে। জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আইন মন্ত্রণালয় খাতে মঞ্জুরি দাবির ওপর সংসদ সদস্যদের ছাঁটাই প্রস্তাবের বক্তব্যেও জবাবে আইনমন্ত্রী একথা জানান। তিনি আরো জানান, ধর্ষণ মামলায় ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির চরিত্র নিয়ে ‘নেতিবাচক’ মন্তব্য করার বিধান বাতিল করতে বিদ্যমান সাক্ষ্য আইনের সংশোধনী বিল সংসদের আগামী অধিবেশনে তোলা হবে।
বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারিমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা দাবি করেন বিএনপি’র সংসদ সদস্যরা। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা অনুমতি দিলাম খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার। এরপর তারা খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বাসায় নিয়ে গেলেন। তিনি বলেন, তাদের যে দরখাস্ত সেটা দণ্ডবিধির ৪০১ ধারায় গ্রহণ করা হয়। একটা দরখাস্ত যখন গ্রহণ করা এরপর কি আর কিছু করা যায়? ৪০১ ধারায় আবেদন গ্রহণ হয়ে গেছে এখন আর কিছু সম্ভব নয়। এটা যদি তারা দেখাতে পারেন যে আইনে সম্ভব, তাহলে আমি আইন পেশা ছেড়ে দেবো।
আইনমন্ত্রী বলেন, তারা বলছেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কথা। খালেদা জিয়া অসুস্থ ছিলেন। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আমরা তো চিকিৎসায় বাধা দেইনি। এখন তারা যে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলছেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে একমাত্র মুক্তি দিতে পারে আইন-আদালত। আর সাজা মওকুফ করে মুক্তি দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি। যদি রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা হয়। আর দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। তবে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করতে হবে দোষ স্বীকার করে। দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করলে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা করে মুক্তি দিতে পারেন।
এদিকে ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের সদস্যরা সাক্ষ্য আইনটিকে যুগোপযোগী করার দাবি জানান। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ধরা, এখানে রেপ কেসে (ধর্ষণ মামলা) ভিকটিমের চরিত্র নিয়ে কথা বলার একটা সাব সেকশন আছে। সেটাকেও পরিবর্তন করার জন্য আমি নির্দেশনা পেয়েছি। সেটাও পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা মনে হয় পূর্ণাঙ্গভাবে সেপ্টেম্বর মাসে যে সংসদ অধিবেশন হবে সেখানে আইন নিয়ে আসতে পারবো।
সাক্ষ্য আইনে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার যুক্ত করা হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, সাক্ষ্য আইনের কথা বলা হয়েছে। এখানে একটু বলে রাখি, অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট যুগোপযোগী করার জন্য কাজ চলছে। আমার মনে হয় আগামী সংসদে আমরা এটা আনতে পারবো। বিশেষ করে এটা হবে ভার্চুয়াল। তিনি বলেন, সাক্ষ্য আইনে ভার্চুয়াল ট্রায়ালের কোনো সুযোগ নেই। কাশিমপুর ও কেরানীগঞ্জ জেলে আদালত যাতে ওখান থেকে ভার্চুয়ালি করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন এই সাক্ষ্য আইনে পরিবর্তন করার কাজ চলছে।
ভার্চুয়াল আদালত চালুর প্রসঙ্গ টেনে আনিসুল হক বলেন, করোনার কারণে গত বছর ২৫ মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আদালত বন্ধ ছিল। এতে অনেক মামলা জমে যায়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলা পরিচালনার বিধান হয়। এ কারণে এক লাখ ৩৭ হাজার ৩৩০টি মামলা নিষ্পত্তি সম্ভব হয়েছে। এই ভার্চুয়াল কোর্ট না হলে আজকে ৩৯ লাখ মামলার জায়গায় আমাদের ৪১ লাখ মামলা পেন্ডিং থাকার কথা শুনতে হতো।

Print Friendly, PDF & Email