নিজস্ব প্রতিবেদক:
সুষম, নিরাপদ ও শক্তিশালী খাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করছেন খাদ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুদার। এলক্ষ্যে গ্রহণ করেছেন নতুন-নতুন পরিকল্পনা। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে আগামীতে বাংলাদেশের খাদ্য ব্যবস্থাপনা বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে জায়গা করে নিবে বলে আশাবাদী তিনি। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টিমান উন্নয়নেও কাজ করছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভবিষ্যৎ কৌশল প্রনয়নের ওপর অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, পৃথিবী এখন ইতিহাসের এক চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। কোভিড ১৯ মহামারির কারণে মানবজাতির সংকট বাড়ছে। এ সময়ে সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ সুরক্ষিত নয়। বাংলাদেশ সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর সমান জোর দিয়ে করোনাকালীন বিশেষ উদ্যোগ নেয়। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে করোনাকালে ১ কোটির বেশি আয় রোজগারহীন মানুষকে অন্তর্ভূক্ত করে খাদ্য সহায়তা দেয়। মহামারির কারনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিকসহ পাঁচ মিলিয়ন মানুষকে নগদ প্রণোদনা দিয়েছে। মহামারিকালে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের অর্জন প্রসংশনীয়।
খাদ্য মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারী সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নত হচ্ছে সমাজে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠির জীবনমান। আগামী দিনে দেশে কোন গৃহহীন পরিবার থাকবে না উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গৃহহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করার কাজ চলছে। মুজিবর্ষ উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে সোয়া এক লাখেরও বেশি গৃহহীনকে নতুন ঘর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছিল বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই আজ আমরা মাথা উচু করে বিশ্বের দরবারে তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করছি।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ধান মজুত সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। সারা দেশে ২০০ সাইলো নির্মাণ ছাড়াও খাদ্যগুদামগুলো মেরামত করে এ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে উল্লেখ করে তিনি কৃষক ও ভোক্তার জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রাইস কমিশন (মূল্য কমিশন) গঠনের ওপর গুরত্বারোপ করেন।
বাজার মনিটরিংয়ের প্রধান ভূমিকা পালন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ও মনিটরিং করে থাকে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মূল ভূমিকা সরকারিভাবে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা এবং খাদ্য সরবরাহ সচল রাখা, বিশেষত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, সরকার প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনে, মধ্যসত্বভোগীদের খাদ্য গুদামে প্রবেশাধিকার নেই। মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্মরোধে ফুড গ্রেড লাইসেন্স দিচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কেউ অবৈধ মজুদ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মুনাফার প্রতি অতিলোভের কারণে মাঝে মাঝেই মূল্যবৃদ্ধি ঘটে থাকে। মূল্য কমিশন গঠন করা হলে ব্যবসায়ীদের এ প্রবনতা কমে যাবে। অবৈধ মজুমদারদের কারসাজিরোধ কল্পে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ন্যায্যমূল্য পাওয়া কৃষকের অধিকার। কৃষিখাতকে ডিজিটালাইজ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কৃষকরা অ্যাপ ব্যবহার করছে। সবাইকে অ্যাপের আওতায় আনা গেলে উৎপাদনের সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণেও তা সহায়ক হবে। গত দুই বছর কৃষক ধানের নায্যমূল্য পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব,এ সরকারের সময়ে কৃষি গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৫০ সালের ১৭ জুলাই নওগাঁ জেলার শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রয়াত কামিনী কুমার মজুমদার ও মাতা প্রয়াত সাবিত্রী বালা মজুমদার। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সাধন চন্দ্র মজুমদার অষ্টম। ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালে তিনি তাঁর পিতাকে হারান। তিনি নওগাঁ কেডি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং চৌমুহনী সরকারী ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করার পর নওগাঁ ডিগ্রী কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। চৌমুহনী কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিয়ামতপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাথে এবং দেশ পুনর্গঠনে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন।
এই বর্ষীয়ান নেতা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার) থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নবম জাতীয় সংসদে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সাধন চন্দ্র মজুমদার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদে তিনি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তৃতীয় বারের মত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার) থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ দিয়ে ৭ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োজিত আছেন।