সংসদ প্রতিবেদক:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশংসা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করার ঘোষণা দিলেও এখনো দুর্নীতি লুটপাট চলছে। দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্মকে ইস্যু করে যাতে দেশকে কেউ অস্থিতিশীল করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হবে। সেটা না হলে প্রধানমন্ত্রীর অর্জন ভবিষ্যতে ধরে রাখা যাবে না। ২৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা একথা বলেন।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, সুবর্ণজয়ন্তীর অলোচনার দিনে অনুরোধ থাকবে আমরা ধর্মকে ইস্যু করবো না। এটা চলবে না। এটাকে ইস্যু করে এই সমাজকে অস্থিতিশীল করবেন না। ধর্মকে যারা ইস্যু করছেন, তারা দেশের জন্য কাজ করছেন না। দেশকে অস্থিতিশীল করছেন। এটা অমঙ্গল বয়ে আনবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ধর্মীয় নিরপেক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যারা ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের অর্জনকে ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সংবাদমাধ্যমের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারবিভাগ নিরপেক্ষ করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ করতে হবে। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হবে। সেটা না হলে প্রধানমন্ত্রীর অর্জন ভবিষ্যতে ধরে রাখা যাবে না, এমন আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ছাত্র-জনতার অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু সারাজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। সাড়ে ৫৪ বছরের জীবনের ১৪ বছরই জেলে থেকেছেন বঙ্গবন্ধু। তার মতো ত্যাগ ইতিহাসে বিরল। সেটা একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব হয়েছিলো। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে খাদ্যের সংকট ছিলো, কিন্তু এখন জনসংখ্যা বাড়লেও এখন তা নেই। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে বস্ত্রের সংকট নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এখনো দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। অর্থপাচার চলছে। ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে দুর্নীতি লুটপাট বন্ধের দাবি জানান তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘আলাদিনের আশ্চর্য’ প্রদীপ বলে আখ্যায়িত করে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. ফখরুল ইমাম বলেন, আমরা আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হাতে পেয়েছি। সেই প্রদীপ হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর কারণেই এতো উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের সব উদ্দেশ্য রাতারাতি পূরণ হয়ে যাবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে দেশপ্রেম, সততা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা হলে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কিছুই অর্জন করতে পারবো।
সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে কিছু বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। শক্তহাতে দুর্নীতির লাগাম ধরতে হবে। জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার কমানো, বেকারত্ব সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো, উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা মোকাবিলা, দ্রব্যমূল্যে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর আমাদের প্রয়াত নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যে গণতন্ত্রের জন্য ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন, সেই গণতন্ত্রকে এখন টর্চলাইট দিয়ে খুঁজতে হয়। তিনি বলেন, কথায় কথায় আমরা অনেকেই গণতন্ত্রের কথা বলি। গণতন্ত্র আমরা পেয়েছি সত্য। কিন্তু গণতন্ত্র আদৌ কি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে? বাবলা বলেন, ‘গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ- এ চার নীতির ওপর ভিত্তি করে ৫০ বছর আগে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। সেই স্বাধীনতার কতটুকু সুফল আমরা ভোগ করতে পেরেছি? কতটুকু পূরণ হয়েছে আমাদের প্রত্যাশা?তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে অর্থনৈতিকভাবে, অবকাঠামোগতভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের এক রোল মডেল। বাংলাদেশ আজ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। কিন্তু আমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে।’জাপার দলীয় এই এমপি বলেন, ‘সত্যিকারের সুখী-সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বপ্নের সোনার বাংলা রূপে গড়ে তুলতে হবে। যে অর্থনৈতিক উন্নতি ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে, তার সুফল আরও অধিক মাত্রায় জনসাধারণের কাছে পৌঁছাতে হবে।’এমপি বাবলা আরও বলেন, ‘আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে সত্য। কিন্তু তার সিংহভাগ কয়েক হাজার কোটিপতির ঘরে আবদ্ধ। দেশের অর্থ কালো টাকার মালিকরা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশে বেগম পাড়ার মতো কালো টাকার ধনীপাড়া গড়ে উঠেছে, যা কাম্য হতে পারে না।’তিনি বলেন, ‘দুগোৎসবের সময় সাম্প্রদায়িক শক্তির যে আস্ফালন দেখেছি, তা স্বাধীন বাংলাদেশে কল্পনাও করতে পারি না। এর আগে আমরা ৬৪ জেলা বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠতে দেখেছি। বাংলা ভাই, আব্দুর রহমানদের উত্থান দেখেছি। জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা দিতে দেখেছি। আমরা দেখেছি, রামু, নাসিরনগর, রংপুর, মুরাদনগর, ভোলা, শাল্লা, নোয়াখালী, পীরগঞ্জে সংখ্যালঘুদের ওপরে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা।’
বাবলা আরও বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির মাঝে যোজন যোজন ব্যবধান। স্বাধীনতার ৫০ বছরে, সে কথা বলাই বাহুল্য। তবু আমরা স্বপ্ন দেখি, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আবারও একটি সত্যিকারের শোষণ, দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও দুর্নীতিমুক্ত একটি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াই।’