সমালোচনার তোয়াক্কা না করেমানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাবেন শেখ হাসিনা

সংসদ প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু উন্নয়নশীল দেশ না, সর্বক্ষেত্রেই আজকে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের একটা ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট অর্জন। তাই যে যেটাই বলুক, যত সমালোচনাই করুক, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং আমরা কাজ করে যাব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২৮ নভেম্বর সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সংসদের অধিবেশন সমাপ্তি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনানোর মধ্য দিয়ে অধিবেশনের ইতি টানেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।অধিবেশন শেষ করার আগে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ৩ জানুয়ারি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণের ভিডিওচিত্র অধিবেশন কক্ষের স্ক্রিনে দেখানো হয়।
সমাপণী বক্তব্যে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক রকমের চক্রান্ত থাকবে, কিন্তু সেগুলো মাথায় নিয়েই আমাদের চলতে হবে। জাতির পিতা যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হত। জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ বা বেগম জিয়ার কথা বলেন, এরা তো দেশকে আসলে কখনও উন্নত করতে চায়নি। ক্ষমতা তাদের কাছে ছিল ভোগের বস্তু। তাদের সাথে কিছু লোক ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দলে নিয়ে একটা এলিট শ্রেণী তৈরি করা। দেশের মানুষ কিন্তু যেই তিমিরে সেই তিমিরেই ছিল। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ এগিয়ে আসেনি।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠায় তাতে অবদানের জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করেছে বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এখন স্বল্পোন্নত দেশের সব সুবিধা পাওয়া যাবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে এটা বাস্তবায়নে আমরা অনেক সুবিধাও পাব। কাজেই সেই দিকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের বেশ কিছু পদক্ষেপও নিতে হবে এবং সেই প্রস্তুতিও কিন্তু আমরা নিচ্ছি। এই এলডিসি থেকে আমরা যেই উত্তরণ পেয়েছি, এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ আমরা মনে করি, বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে আরেকটি মাইলফলক। বাংলাদেশকে সারাবিশ্বের কাছে ব্রান্ডিং করার একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।
২০২৬ সাল থেকে বাংলাদেশ পরিপূর্ণভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তার সব ধরনের কাজ করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি উদীয়মান, বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের বাজার সৃষ্টির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে এমন একটা বার্তা এখন বিশ্বব্যাপী পাবে। বিশ্ববাসীর কাছে আমরা সেটা পৌঁছাতে পারব।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আওয়ামী লীগ আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচন করে। আমি জানি এদেশে খুনিরা মুক্ত, যুদ্ধাপরাধীরা মুক্ত তারাই রাজত্ব চালাচ্ছে। যেখানে আমার ছোট ১০ বছরের ভাইকেও ছাড়েনি। সেখানে আমিও রেহাই পাবো না। আমারও হয়তো যে কোনো সময় মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু সেটা জেনেও শুধু দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার নিয়ত নিয়ে আমার ছোট বাচ্চা ১০ বছরের ছেলে জয় এবং আট বছরের মেয়ে তাদের আমার বোনের কাছে দিয়ে আমি বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছিলাম। একটা লক্ষ্য নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা এ দেশ স্বাধীন করেছেন, সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছে সে স্বপ্নটা অধরা রয়ে গেছে সেই স্বপ্ন যেন পূরণ করতে পারি সেই লক্ষ্যটা নিয়েই কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি। বার বার আঘাত এসেছে কিন্তু জানি না আল্লাহ তালা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং আমার দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময় আমাকে রক্ষা করেছেন। আল্লাহ আমাকে একটু সুযোগ দিয়েছেন মানুষের সেবা করার আজকে একটা মর্যাদায় বাংলাদেশকে উন্নীত করতে সক্ষমত হয়েছি।
যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) এর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।দারিদ্র্যের হার যা ৪০ ভাগ ছিল আজকে তা ২০ দশমিক ৫ ভাগে হ্রাস পেয়েছে। অর্থনৈতিক আকার এখন ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলার উন্নীত হয়েছে। জিডিপি (প্রবৃদ্ধিতে) আমরা ৮ ভাগ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সেটা আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।উন্নয়নের পাশাপাশি বৈশ্বিক শান্তি সূচক ২০২০ এও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানের ৭ ধাপ উন্নতির তথ্য জানান শেখ হাসিনা।
শেষ হওয়া অধিবেশনের কার্যদিবস ছিল ৯টি। ৯টি বিল উত্থাপন ও ৯টি বিল পাস হয়েছে।৭১ বিধিতে ৪২টি নোটিশ পাওয়া যায়, যার মধ্যে একটিও আলোচনা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য মোট ৪১টি প্রশ্ন এসেছিল, এরমধ্যে তিনি জবাব দেন ১০টির। অন্য মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন জমা পড়ে ১ হাজার ১২টি। তার মধ্যে ৫৬৬টি উত্তর তারা দিয়েছেন। যেগুলোর উত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়েছে।
ইউনেস্কো কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ইকোনমিকস’ প্রবর্তন করায় সংস্থাটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ বিধিতে সাধারণ আলোচনা হয়। এটি জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়। প্রস্তাবটি এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে একটি বিশেষ আলোচনার আয়োজন করা হয়। আলোচনার শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বক্তৃতা করেন। এজন্য রাষ্ট্রপতিকে সংসদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান স্পিকার।তিনি বলেন, এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি তার বক্তব্য রাখেন। এই প্রস্তাবের ওপর ২৪ ও ২৫ নভেম্বর বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ৫৯ জন সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। ১০ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের আলোচনা পরে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব সাধারণ গ্রহণ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *