সংসদ প্রতিবেদক:
জনস্বার্থকে সবকিছুর উর্ধ্বে স্থান দিতে জনপ্রতিনিধির প্রতি আহবান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। একই সঙ্গে ধর্মের নামে কোনো গোষ্ঠী যাতে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলেছেন। রোববার জাতীয় সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর নীতির কারণে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। উন্নয়নের মত মৌলিক প্রশ্নে দল-মত, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে আপামর জনগণকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করারও আহবান জানান তিনি।
প্রতিবারের মত এবারও মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ১৬৯ পৃষ্ঠা ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়েন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন পূর্ণাঙ্গ ভাষণ টেবিলে উপস্থাপন করা আছে। এ সময় তার মূল বক্তব্য পঠিত বলে গণ্য করার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিনকে অনুরোধ জানান। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। সাধারণত বছরের শুরুর অধিবেশনের প্রথম দিন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার তা করা হয়নি।
ভাষনে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বের জন্য একটি অনন্য উদাহরণ। দেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে সম্প্রীতি সহকারে স্ব-স্ব ধর্ম চর্চা করতে পারে, সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব উৎসবমুখর পরিবেশে ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করা হচ্ছে। তথাপি ধর্মের নামে কোনো ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী যাতে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সকল প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ। জনপ্রতিনিধি হিসাবে জনস্বার্থকে সবকিছুর উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। আমি সরকারি দল ও বিরোধী দলের সকল সংসদ সদস্যদের এ মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। এ লক্ষ্যে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং উন্নয়নের মত মৌলিক প্রশ্নে দল-মত, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে আপামর জনগণকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই। আসুন লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল মহান স্বাধীনতা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে তারই যোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে আজ বাঙালি জাতি এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার পথে। জনপ্রতিনিধিদের সবকিছুর ঊর্ধ্বে জনস্বার্থকে স্থান দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সংসদে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যদের প্রতিও আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, রূপকল্প ২০২১-এর সফল বাস্তবায়ন শেষে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়িত হচ্ছে। পানি ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশগত পরিবর্তন বিবেচনা করে প্রণীত বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর আওতায় বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০৩১ সালে উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হতে চাই আমরা। ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরণ পরবর্তী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে তা দ্রুত বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে হবে। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগাতে হলে আমাদের জনমিতির সুবিধা পুরোপুরি ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানসহ বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানির প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে। বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন প্রশিক্ষণ কারিক্যুলাম প্রস্তুত, বিদ্যমান কারিক্যুলাম যুগোপযোগীকরণ এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে সার্টিফায়েড দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, বিগত দেড় দশকে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য সরকারি অর্থের অপব্যবহার রোধপূর্বক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি সরকারি সকল কার্যক্রমে জনগণের যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্রকে অধিক কার্যকর করতে হবে।