সংসদ প্রতিবেদক:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ঐতিহাসিক ৬ দফাকে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার রিহার্সেল উল্লেখ করে সরকারি ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন, ঐতিহাসিক এই ৬ দফাই ছিল স্বাধীনতার মূল ভিত্তি, স্বাধীনতার উৎস্য। এই ৬ দফার সিঁড়ি বেয়েই বঙ্গবন্ধু গোটা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে গিয়েছিলেন স্বাধীনতার পথে। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিলো স্বাধীনতা। পাঠসূচিতে ঐতিহাসিক ৬ দফা অন্তর্ভূক্তির জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল কালাম আজাদ এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতির সামনে ৬ দফা উত্থাপনের পর বঙ্গবন্ধু আমাদের বলেছিলেন- ‘সাঁকো দিলাম, সেই সাঁকো দিয়েই আমরা অভীষ্ঠ লক্ষ্যে (স্বাধীনতা) পৌঁছাবো। সেটি তিনি করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, ৬ দফার ভিত্তিতে ৭ জুন সারাদেশে যে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়, তা ছিল অবিস্মরণীয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসবেই। তাই ৬ দফার জন্য বঙ্গবন্ধু ৩২ দিনে সারাদেশে ৩৫টি জনসভা করেন। এর মধ্যে ৮ বার গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন। তারপরও বঙ্গবন্ধুর কন্ঠকে স্তব্ধ করতে পারেনি। একদিকে ফাঁসির মঞ্চ, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর আসন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বারবার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন, কিন্তু স্বাধীনতার প্রশ্নে কোন আপোষ করেননি। এরপর আসাদ-রুস্তমসহ অগণিত শহীদের রক্তের মধ্যে দিয়ে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর কারামুক্ত শেখ মুজিবকে রেসকোর্স ময়দানে ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে আমরা ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধীতে ভূষিত করেছিলাম।
আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর উত্থাপিত ৬ দফা দাবি ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক দলিল ‘ম্যাগনা কার্টা’। এই ৬ দফার ভিত্তিতেই বঙ্গবন্ধু একটার পর একটা আন্দোলনের কর্মসূচির মাধ্যমে গোটা বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ৬ দফা ঘোষণার পর পুরো বাঙালি জাতির অভূতপূর্ব গণজাগরণের সৃষ্টি হয়। আইয়ুব খান-মোনায়েম খানরা অস্ত্রের ভাষায় দমনের হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু সফল হয়নি। তিনি বলেন, পাকিস্তানীদের সকল জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেই গোটা জাতি স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকতে বঙ্গমাতা ছাত্রনেতাদের কাছে সকল নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন। আগরতলা মামলার পর গোটা জাতি অগ্নিস্ফুলিংঙ্গের মতো গর্জে ওঠে, বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা তখন আকাশচুম্বি। তখন সকলকে ৬ দফা নিয়েই রাজনীতি করতে হয়েছে। ওই ৬ দফার মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার বীজ বপন হয়েছিল।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ছিল প্রখর। তিনি ধাপে ধাপে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ঘোষণার পর ৬ মাস পর্যন্ত তাঁর কোন খোঁজ ছিল না, পাকিস্তানের একটি ঘরে আটকে বঙ্গবন্ধুকে নির্যাতন করা হয়েছিল। সারাদেশে কারফিউ দিয়ে বহু মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপরও কিছু করতে না পেরে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় আইয়ুব খান। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই উন্নত দেশের কাতারে পৌছতাম। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি দিয়ে বিচার বন্ধ করা হয়। তার হাতে সৃষ্ট দল এখন গণতন্ত্রের কথা বলে ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ঘোষণার পর এই ৭ জুন নজীরবিহীন রক্তাক্ত হরতাল পালিত হয়েছিল গোটা দেশে। ৬ দফাকে বানচাল করতে হানাদাররা ব্যাপক হত্যাকান্ড চালায়। কিন্তু কোন বাঁধা বাঙালি জাতিকে আটকাতে পারেনি। ৬ দফার ভিত্তিতেই আসে স্বাধীনতা। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রনেতারা যা বলতেন, দেশের জনগণ সে কথা শুনতো। আজ সেই ছাত্রনেতাদের সেই অবস্থান আর নেই।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঐতিহাসিক ৬ দফার মধ্যেই নিহিত ছিল বাঙালির স্বাধীকার ও স্বাধীনতার রূপরেখা। ছাত্র-শ্রমিকসহ আপমার জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৬ দফার ভিত্তিতেই সূচিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। পাঠ্যসূচিতে ঐতিহাসিক ৬ দফা অন্তর্ভূক্তির জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।