করোনার চতুর্থ ঢেউ এসেছে, সবাই বুস্টার ডোজ নিন: প্রধানমন্ত্রী

 

নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈশ্বিক অতিমারি করোনারর চতুর্থ ঢেউ এসেছে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে বুস্টার ডোজ গ্রহণেরও আহ্বান জাানিয়েছেন। বুধবার জাতীয় সংসদের ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি। সবাইকে টিকা দিতে পেরেছি। ডব্লিউএইচওর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা শতভাগ টিকা দিয়েছি। নতুনভাবে আবার দেখা দিয়েছে। সবাইকে বলবো স্বাস্থ্য-সুরক্ষা মেনে চলতে।
বিগত ১৩ বছরের সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা বার বার ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার ফলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই গৌরবটা আমরা বয়ে আনতে পেরেছি।
বক্তব্যের শুরুতে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সদ্য প্রয়াত নির্মল রঞ্জন গুহর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে তিনি বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের নির্মল গুহ মৃত্যুবরণ করেছে। এই বন্যার সময় তার নেতৃত্বে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছিল। সে অসুস্থ হয়ে যায়। আজকে মারা গেলো। আমি তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
এর আগে প্রশ্নোত্তর পর্বে ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুই বছর দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংসদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ষড়যন্ত্রের ফলে আমাদের সেতু নির্মাণ দুই বছর বিলম্বিত হলেও আমরা হতোদ্দম হইনি। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। দেশি ও বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র এবং বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ পেয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকারি দলের মেরিনা জাহান। লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং আমাদের প্রত্যয়। আমরা এ সেতু করবোই, সেই জেদ। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।
একই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে আমি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তারা জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিবেদন পেশ করে।
এরপর ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সেতুর বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়নের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজে বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন প্র্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) এর সাথে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হলে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জানান, প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজের নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা এবং আইডিবি ঋণচুক্তি স্থগিত করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে কানাডার টরেন্টোর একটি আদালতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে পুনরায় ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিশ্বব্যাংকের ঋণ গ্রহণ না করে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বহু কাঙ্খিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সূচনালগ্নে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, চ্যালেঞ্জসমূহের উত্তরণ এবং হার না মানা সুদৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এ সেতু আজ দৃশ্যমান বাস্তবতা।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনে শুকরিয়া আদায় করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এতে কোটি কোটি দেশবাসীর সঙ্গে আমিও আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। অনেক বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ বহু-কাঙ্খিত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এ সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহা-কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয় এ সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের।
সরকারি দলের নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী নিজস্ব প্রযুক্তিতে স্বল্প পরিসরে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ বিমান তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কৌশলগত দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ধীরে রীতে এই প্রচেষ্টা সফলতার পথ ধরে একদিন বাংলাদেশ উচ্চ প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার ও পাইলট বিহীন বিমান তৈরি করতে সক্ষম হবে।
জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার অর্থনীতির চাকা সচল রেখে দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় রাখার চেষ্টা করছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের গৃহিত পদক্ষেপের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।

Print Friendly, PDF & Email