সংসদ প্রতিবেদক
জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া মারা যাওয়ায় শুন্য হওয়া ডেপুটি স্পিকার পদে কে দায়িত্ব পাচ্ছেন তা নিয়ে ইতিমধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান সংসদের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। ঐদিন ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার এবং ফজলে রাব্বী মিয়া ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। সংবিধান অনুযায়ী চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী ৯ মাস মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই শেষে গত ২৩ জুলাই ভোররাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কস্থ মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আগামী আগষ্ট মাসের শেষ সপ্তাহে সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী ঐ অধিবেশনেই নতুন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করা হবে। এই নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা সরাসরি ভোটে দিয়ে থাকেন।
ডেপুটি স্পিকার পদে আলোচনায় উঠে এসেছে অনেকের নাম। আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ডেপুটি স্পিকার পদে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু, সাবেক হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামের নাম নিয়ে দলে আলোচনা হচ্ছে।
জাতীয় সংসদের এক জন হুইপ জানান, সংবিধান ও সংসদে কার্যপ্রনালী বিধি সম্পর্কে ভাল ধারনা আছে এমন কাউকে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে মনোনয়ন দেবেন সংসদ নেতা ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলা যায় সংসদ নেতার একক সিদ্ধান্তের ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে। অধিবেশন শুরু হতে যেহেতু এখনো প্রায় এক মাস সময় আছে তাই দল এখনো কাউকে ডেপুটি স্পিকার পদে মনোনয়ন চুড়ান্ত করেননি।
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ অধিবেশন চলাকালে ডেপুটি স্পিকারের পদ শূন্য হলে
সাত কর্ম দিবসের মধ্যে তা পূরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে অধিবেশন চলমান
না থাকলে পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে তা পূর্ণ করার জন্য সংসদ সদস্যরা
একজনকে নির্বাচিত করবেন।
সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদের (১) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো সাধারণ নির্বাচনের
পর সংসদের প্রথম বৈঠকে সদস্যদের মধ্য থেকে সংসদ একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করিবেন এবং এ দুই পদের যে কোনটি শূন্য হইলে সাত দিনের মধ্যে কিংবা ওই সময়ে সংসদ বৈঠকরত না থাকিলে পরবর্তী প্রথম বৈঠকে তাহা পূর্ণ করিবার জন্য সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচিত করিবেন। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১০ ধারায় একই কথা বলা হয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী, অধিবেশনের শুরুতে একজন সংসদ সদস্য ডেপুটি স্পিকার হিসেবে অপর একজন সংসদ সদস্যের নাম প্রস্তাব করবেন। তার প্রস্তাবকে অন্য একজন সংসদ সদস্য সমর্থন করবেন। পরে স্পিকার প্রস্তাবটি ভোটে দেবেন। কণ্ঠ ভোটে পাস হওয়ার মধ্যদিয়ে নতুন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় একজন হুইপ বলেন, আইন,
বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি
শহীদুজ্জামান সরকার; ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম; সাবেক
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু এবং সরকার দলীয় সাবেক
চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ- ওনাদের মধ্য থেকেই আসতে পারেন পরবর্তী
ডেপুটি স্পিকার।
উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে ৬ বার নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সংসদে সরকার দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব
পালন করেন তিনি। পরে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অষ্টম জাতীয় সংসদে
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের দায়িত্বে ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় চিফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম জাতীয় সংসদে সরকারি প্রতিশ্রুতি
সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গত গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
মারা যান ফজলে রাব্বী মিয়া। তার মৃত্যুতে শূন্য হয়ে যায় একাদশ জাতীয়
সংসদের ডেপুটি স্পিকারের পদটি। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয়
সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।
নওগাঁ-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার দশম জাতীয়
সংসদে সরকার দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও
খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং পরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনবারের এ সংসদ সদস্য।
এবি তাজুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদে সদস্য হিসেবে
নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মুক্তিযুদ্ধ
বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব
পালন করেছেন তিনি।
গত ২৪ জুলাই প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার
সংসদীয় আসন গাইবান্ধা-৫ শুন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় সংসদ
সচিবালয়। কোনো সংসদীয় আসন শুন্য ঘোষিত হলে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের কথা সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে।