বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট নিরাপদ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার ফলে সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে গেলেও দেশের অর্থনীতি এখনও যথেষ্ট গতিশীল ও নিরাপদ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারি যে, কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা প্রত্যক্ষ করলেও আমাদের অর্থনীতি এখনও গতিশীল এবং নিরাপদ।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বৈশ্বিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে অত্যন্ত সজাগ ও সক্রিয়।  প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি যশোরে ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (শীতকালীন) ২০২২’ এ যোগদান অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।

দেশপ্রেম, আন্তরিকতা, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরে দেশ ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধের কথা মাথায় রেখে বিমান বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অনেক দেশ যখন দুর্ঘটনা, দুর্বিপাকে পড়ে, আমরা কিন্তু তাদের সহযোগিতা করি। আবার আমাদের দেশে যখন ঝড়, বন্যা বা কোন রকম দুর্ঘটনা ঘটে বিমান বাহিনীর সদস্যসহ সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্য জনগণের পাশে দাঁড়ায়, জনগণের সেবা করে।  শেখ হাসিনা বলেন, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা। যেকোন একটা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য এটা একান্তভাবে দরকার।
‘বাংলাদেশ সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতিতে বিশ্বাস করে’-জাতির পিতার রেখে যাওয়া সেই পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরও দক্ষতার দিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের সব ধরনের উৎকর্ষতা বজায় রেখে চলতে হবে এবং সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে।’ আমরা সব সময় প্রশিক্ষণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই। সরকার প্রধান বলেন, দেশমাতৃকার প্রতি এবং দেশের জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর ভাষণেও বলেছেন যে দেশ ও দেশের জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘কাজেই, আমি আশা করি, আমাদের নবীন যারা আজ থেকে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন তাদের জন্য এই কথা অনেক প্রযোজ্য।’

এর আগে সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে যশোর আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে ১০টায় যশোর বিমান বাহিনী একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অবতরন করেন তিনি। এ সময় বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম জানায় বিমান বাহিনীর চৌকস সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী খোলা জীপে করে প্যারেড পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন।

পরে তিনি সেরা ক্যাডেটদের হাতে ‘সোর্ড অব অনার’, ‘চীফ অব এয়ার স্টাফ ট্রপি’ এবং ‘কমাড্যান্টস ট্রপি’ তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত ক্যাডেটদেরকে ফ্লাইং ব্যাজ পরিয়ে দেন এবং বিভিন্ন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননায় ভূষিত করেন। ’৮১ নম্বর বাফা কোর্সে সার্বিক প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ চৌকস সাফল্যের জন্য স্কোয়াড্রন সিনিয়র অফিসার খন্দকার ইমামুর রহমান সোর্ড অব অনার লাভ করেন। অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ ফ্লাইফাস্ট এবং এরোবেটিকস প্রদর্শন করেন বিমান সেনারা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু অপারেশন এবং প্রশিক্ষণই নয়, আমরা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কর্মরত এবং অবসরপ্রাপ্ত সকল সদস্যদের জীবনযাত্রার মনোন্নয়নে নানামুখী কল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, আমি চাই আমাদের ক্যাডেটদের জীবন সুন্দর হোক, সফল হোক এবং বাংলাদেশ যেন আমাদের ক্যাডেটদের নিয়ে গর্ব করতে পারে। তাছাড়া শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের বিমান সেনারা কাজ করে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চলতে হয়। সে জন্য প্রশিক্ষণের কথা সবসময় মনে রাখতে হবে এবং প্রশিক্ষণের ওপরই সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রশিক্ষণ উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করে এই কথা সবসময় মনে রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বাধীন দেশ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা বিশ^ দরবারে সবসময় মাথা উঁচু করে চলবো, এটাই আমাদের লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর রয়েছে এক গৌরবময় ইতিহাস। জাতির পিতার উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর একটি ড্যাকোটা বিমান, একটি অটার বিমান ও একটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারসহ ৫৭ জন সদস্য নিয়ে ‘কিলো ফ্লাইট’ নামে এ বাহিনী যাত্রা শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক বিবেচনায় রেখে একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও পেশাদার বিমান বাহিনী গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে স্বাধীনতার পরপরই বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয় সেই সময়কার অত্যাধুনিক সুপারসনিক যুদ্ধবিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার এবং এয়ার ডিফেন্স রাডার।

সরকার প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার অপরিসীম প্রজ্ঞা এবং দূরদৃষ্টিকে সামনে রেখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে একটি যুগোপযোগী, প্রযুক্তিগতভাবে সুসজ্জিত ও আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাঁর সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয় চতুর্থ প্রজšে§র অত্যাধুনিক মিগ-টুয়েন্টি নাইন যুদ্ধবিমান, সি-ওয়ান থার্টি পরিবহন বিমান এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার ডিফেন্স রাডার।
তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সাল হতে এ যাবৎ বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন ও অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এফ-সেভেন বিজিআই যুদ্ধবিমান, সর্বাধুনিক অ্যাভিওনিক্সসমৃদ্ধ সি-ওয়ান থার্টি জুলিয়েট পরিবহন বিমান, এম আই-ওয়ান সেভেন ওয়ান এসএইচ হেলিকপ্টার, মেরিটাইম সার্চ এন্ড রেসকিউ হেলিকপ্টার সংযোজনসহ আমরা নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে প্রণীত জাতির পিতার প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করেছে। যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের বিমান, হেলিকপ্টার, রাডার ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহলিং এর লক্ষ্যে আমরা নির্মাণ করেছি ‘বঙ্গবন্ধু এরোনটিক্যাল সেন্টার’। দেশের অ্যাভিয়েশন সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের সরকার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ^বিদ্যালয়’ স্থাপন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির সুনাম আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যপ্তি লাভ করেছে। বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশের অফিসার ক্যাডেটগণ এই একাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। আজ এই প্যারেডে অংশগ্রহণ করছেন নেপাল, ফিলিস্তিন ও জাম্বিয়ার অফিসার ক্যাডেটগণ।
তিনি এ সময় জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। জাতির পিতা মিলিটারি একাডেমিতে একদিন বলেছিলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, এমন দিন আসবে, এই একাডেমির নাম শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নয়, সমগ্র দুনিয়াতে সম্মান অর্জন করবে’। সত্যিই আমরা জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছি।
তাঁর সরকার সবসময় বিমান বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধাদির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের উপর গুরুত্ব প্রদান করে যাচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

Print Friendly, PDF & Email