পদত্যাগের পর বিএনপির হারুন বললেন, সংসদ এখন ‘মহাজোটের কার্যালয়’

সংসদ প্রতিবেদক:
বিদেশ থেকে ফিরে এবার সশরীরে সংসদ ভবনে গিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ। ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে সংসদ ভবনে গিয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির সব সংসদ সদস্যের পদত্যাগ নিশ্চিত হলো। একাদশ সংসদে বিএনপি’র দখলে থাকা ৭টি আসনই শুন্য হলো।

স্পিকারের দপ্তর থেকে বেরিয়ে পদত্যাগী এমপি হারুন সংসদের দক্ষিণ প্লাজার গেইটে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, দেশ এখন আইন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। জাতীয় সংসদ মহাজোটের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এখানে কোনো বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য নেই। এটি একদলীয় সংসদ। আমাদের সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধিতে এ ধরনের কোনো সুযোগ নাই। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাচ্ছে, এইভাবে করতে চাইলে অবশ্যই সংবিধান ও আইনের পরিবর্তন আনতে হবে। বর্তমান সংসদকে অবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে। দ্রুত নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, সরকার ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায় এবং সেই চেষ্টা চলছে। বিএনপি ও তার জোট আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে দেশে কোন অর্থবহ নির্বাচন হবে না। তিনি মহাজোটের শরীকদের পদত্যাগের আহ্বান জানান।

পদত্যাগপত্রে হারুন লিখেছেন, বর্তমানে দেশে চরম দুঃশাসন চলছে। সরকার গণতন্ত্র ও গণবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত। মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ভোটের অধিকার, অর্থনীতি ধ্বংশ করে ক্ষমতা লিপনায় জঙ্গি ও নাশকতার সাজানো মামলা দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেকে দমন-পীড়ন, গণ-গ্রেফতার, গায়েবি মামলা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নজিরবিহীন যা থেকে নারী-পুরুষ কেউ মুক্ত নয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সরকারের নির্দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে মালামাল লুণ্ঠন, আসবাবপত্র ভাঙচুরসহ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ধ্বংস, এসব কর্মকাণ্ডে গোটা জাতি হতবাক ও বিস্মিত। সর্বোপরি মহান জাতীয় সংসদ, রাষ্ট্রের সব অঙ্গকে (বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইন প্রয়োকারী সংস্থা) দলীয়করণের প্রতিবাদে, জনস্বার্থের দাবির বিরুদ্ধে অবস্থানকারী এই সংসদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে, এই সংসদ বাতিলের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে স্বেচ্ছায়, সুস্থ শরীরে, স্থির মস্তিষ্কে, অন্যের বিনা প্ররোচনায় আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।

এর আগে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দেন বিএনপির পাঁচ সংসদ সদস্য। গত ১১ ডিসেম্বর সংসদ ভবনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর দফতরে যান তারা। গত ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশে সংসদ সদস্য পদ ছাড়ার ঘোষণার পরদিন তারা সংসদে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের মধ্যে আব্দুস সাত্তার অসুস্থ থাকায় এবং হারুনুর রশিদ বিদেশে থাকায় অনুপস্থিত ছিলেন। তবে হারুনুর রশিদ তবে ই-মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন। তখন স্পিকার বলেছিলেন, সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বিদেশে থাকায় অনুপস্থিত রয়েছেন এবং সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার অসুস্থ থাকায় সংসদ সচিবালয়ে তার সই মিলিয়ে দেখবেন এবং কথা বলবেন। সব ঠিক থাকলে তার পদত্যাগপত্রও গৃহীত হবে। তবে ই-মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগ পত্র দেওয়ায় হারুনুর রশীদের আবেদন গ্রহণ হবে না, তাকে পরে এসে জমা দিতে হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সশরীর তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সদ্য পদত্যাগ করা সাবেক সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন ও জিএম সিরাজ।

এরআগে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশে সংসদ সদস্যরা জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তারা জাতীয় সংসদে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। ৩৫০ আসনের সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্যরা ছিলেন উকিল আব্দুস সাত্তার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), হারুনর রশীদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), জি এম সিরাজ (বগুড়া-৭), আমিনুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), জাহিদুর রহমান (ঠাকুরগাঁও-৩), মোশাররফ হোসেন (বগুড়া-৪) ও রুমিন ফারহানা (সংরক্ষিত নারী আসন)।

Print Friendly, PDF & Email