আইন প্রণয়নে বৈধতা দেওয়া ছাড়া সংসদের কোন সক্ষমতা নেই : জি এম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিদ্যমান ব্যবস্থায় আইন প্রণয়নে বৈধতা দেওয়া ছাড়া সংসদের আর কিছু করার সক্ষমতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। তিনি বলেছেন, সরকার আইন প্রণয়নে উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন করে। তবে সংসদের সম্মতি ছাড়া কোন আইন প্রণয়ন সম্ভব নয়। এ কারণে রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে আইন প্রণয়নে সংসদ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের কথা বলেছেন। কিন্তু সরকারি দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ। সংসদের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সরকারের যেকোন প্রস্তাবে সরকারি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অটুট থাকে। ফলে সরকারি আইনে সরকারি দল সম্মতি পায়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সরকারি দল স্বাভাবিকভাবেই অনুমতি লাভ করে। আর সংশোধনগুলো গ্রহণ বা বর্জন সরকারের মর্জির ওপর নির্ভরশীল থাকে।

সোমবার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে তিনি আরো বলেন, গত ৫০ বছরে আমরা অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এসেছি। এখন সংসদ অনেক পরিপক্ক বলে আমি দাবি করছি। সেই প্ররিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের একটি সংশোধনী হওয়া আবশ্যক। সরকার গঠনের সময়কাল, সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এবং বাজেট পাস– এই তিনটি বিষয় বাদে সংসদ সদস্যদের নিজের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। যাতে সরকারি দলের সদস্যরা নিজেদের বিচার-বিবেচনা এবং এলাকার মতের প্রতিফলন ঘটিয়ে ভোট দিতে পারেন। এ ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এটা বিশে^র অন্যান্য দেশেও আছে।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, মন্ত্রীদের পরিববর্তে সংসদ সদস্যদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির বিধান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধী দল থেকেও স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। এগুলো ভালো উদ্যোগ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার করা হবে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার করলে ভালো হয়। তিনি আরো বলেন, ১৯৯১ পরবর্তী দেশের প্রায় প্রতিটি সংসদই কোন না কোন দল বর্জন করেছে। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত যতগুলি সংসদ হয়েছে তাতে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্বকারী আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বর্জন করেছে। এখন একটি দল (বিএনপি) তার গোষ্ঠীসহ বর্জন করছে। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার।

উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, যে দেশে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকেন্দ্রীক উন্নয়ন হয়, সে দেশকে গণতন্ত্রহীন বলা যায়। অনেকেই উন্নয়নকে গণতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন। কিন্তু উন্নয়ন কখনোই গণতন্ত্রের বিকল্প হতে পারে না। সরকার পরিবর্তন না হওয়াটাকে অনেকে স্থিতিশীলতা মনে করেন। বস্তুত সরকার পরিবর্তন না হলে এক ধরনের স্থিতিশীলতা দেখা যায়। কিন্তু সেটা বাহ্যিক ও কৃক্রিম স্থিতিশীলতা। এ ধরনের স্থিতিশীলতা ভঙ্গুর ও অল্প দিনেই তা অস্থিতিশীলতায় পরিণত হতে পারে। তিনি আরো বলেন, উন্নয়ন অর্থ অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন উন্নয়নের সহায়ক মাত্র। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে, দেশ ও জনগণের সার্বিক জীবনমানের উন্নয়ন।

Print Friendly, PDF & Email