জনগণের প্রত্যাশা পূরণে জাতীয় সংসদকে অধিকতর কার্যকর করতে হবে: স্পিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি (সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ (২২তম) অধিবেশন ৫ কার্যদিবসে সমাপ্ত হয়েছে। সোমবার অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করার আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জনগণের প্রত্যাশা পূরণে জাতীয় সংসদকে অধিকতর কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার চেতনার সত্যিকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এজন্য জনগণের প্রতিনিধিরূপে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের সংসদ সদস্যদের ভূমিকা রাখতে হবে।

সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত ৬ এপ্রিল শুরু হয়। বিশেষ অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে স্মারক বক্ততা করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা কর্তৃক কার্যপ্রণালী-বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় আনীত প্রস্তাব (সাধারণ) এর উপর ৬৩ জন সংসদ-সদস্য মোট ১০ ঘন্টা ২৭ মিনিট আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। প্রস্তাব গ্রহণশেষে স্পিকার সংসদ অধিবেশনের সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি আদেশ পাঠ করেন। এর আগে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে দেয়া ভাষণের অডিও-ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।

মাত্র ৫ কার্যদিবসের এই অধিবেশনে কোন আইন পাস হয়নি। তবে ৮টি সরকারি বিল উত্থাপন করা হয়। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য ২০টি ও অন্যান্য মন্ত্রীর জন্য ৪৪৯টি প্রশ্নসহ মোট ৪৬৯টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। বিধি-৭১ এ মনোযোগ আকর্ষণের নোটিশ পাওয়া যায় ৩৬টি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩টি রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপন করা হয়।

অধিবেশনে স্পিকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুর্নগঠনের পাশাপাশি অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বনন্দিত ও অনন্য সংবিধান প্রণয়ন ও সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। দীর্ঘ রক্তাক্ত সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের সূচনালগ্নে ১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল নির্বাচিত গণপরিষদে গৃহীত হয় বাংলাদেশের সংবিধান আর ১৯৭২ সালের সাময়িক সাংবিধানিক আদেশবলে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় সংসদীয় গণতন্ত্র। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা লাভের সূচনাতেই সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্র লাভের এরূপ দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশের ’৭২-এর সংবিধানকে অত্যন্ত যুগোপযোগী এবং শ্রেষ্ঠ সংবিধানসমূহের একটি বলে আখ্যায়িত করা হয়। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মহান সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ ও বেগবান করতে আমাদের সক্রিয় হতে হবে। সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করে এসে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। অর্থনৈতিক সূচক, জিডিপি, প্রবৃদ্ধি, রেমিটেন্স, রিজার্ভ, শিক্ষা ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, নারী ক্ষমতায়ন, দারিদ্র বিমোচন, দূর্যোগ মোকাবেলা, সামাজিক উন্নয়ন সূচক – প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং সফলতার স্বাক্ষর রাখছে। তিনি আরো বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যে নিত্য নতুন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হচ্ছে, আসুন সেগুলো উত্তরণে একত্রে কাজ করি। আমাদের সংবিধানের অঙ্গীকার পূরণে, রাজনীতির ধারাকে সুসংহত করি। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য। জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রীতি ও মূল্যবোধ জোরালো করার ক্ষেত্রে সংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই সংসদ সদস্যদের এ লক্ষ্যে জনগণের মাঝে কাজ করে যেতে হবে।
###

Print Friendly, PDF & Email