সংসদ প্রতিবেদক:
বাজার সিণ্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির পদত্যাগ দাবি করেছেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা।
সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনাকালে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বাজার ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য বিষয়ে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বাণিজ্য মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। তারা বাজার সিণ্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করেন।
জবাবে বানিজ্য মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বললেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে প্রস্তুত আছেন। বাজার সিণ্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ক্রাইসিসি তৈরি হবে বলেও জানান তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাজার পরিস্থিতি ও জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গণফোরামের মোকাব্বির হোসেন খান। তিনি মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বলেন, এতো কিছুর পরও কেন আপনি পদত্যাগ করেন না?’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, বাণিজ্যমন্ত্রীকে সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হিসেবে কি বসিয়েছে?
জবাবে মন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, এখানে একজন তো আমাকে পদত্যাগ করতে বললেন। খুব ভালো কথা বলছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলবো উনি (মোকাব্বির) দায়িত্ব নিলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে উনারে দায়িত্বটা দিতে পারেন। কোন সমস্যা নেই আমার।
এ সময় বাজার সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়। এটা ঠিক বড় বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। চাইলে জেল-জরিমানাসহ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার, আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম; সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে। সেই ক্রাইসিস সামাল দিতে আমাদের কষ্ট হবে। এজন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি।
এরআগে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বর্তমান সরকারের সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রণালয় হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজারে গেলে মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এতটাই ব্যর্থ এটিকে মানুষ সিন্ডিকট বান্ধব মন্ত্রণালয় বলে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট জড়িত। অনেকে সংসদে বলেছেন— বাণিজ্যমন্ত্রী এর সঙ্গে জড়িত। পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও কেন পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা থেকে ৯০ টাকা হল?
জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন বাজারে গিয়ে দেখেছি অনেকে কেঁদেছেন। মানুষের পকেটে টাকা নাই। দ্রব্য মুল্যে বৃদ্ধির কারণ সিন্ডিকেট। ডিমের বাজারে কারা সিণ্ডিকেট করে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায়। এটা তো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে না। মন্ত্রী যেখানে সিন্ডিকেটের কথা বলছেন সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী কেন তাদের ধরেন না। তিনি তো নিজেই ব্যবসায়ি, তার তো জানার কথা কারা সিণ্ডিকেট করে। তার কোনো ভুমিকা নেই।
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল কী কাজ করে? এত বড় একটি মন্ত্রণালয়। এর মন্ত্রীর যদি ডায়নামিজম না থাকে, তাহলে দাম তো বাড়বেই। একজন শুধু কাজ করবেন, আর সবাই ঘুমাবেন তাহলে তো দেশ চলবে না। বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। এটা চাইলে অবশ্যই সম্ভব।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, সিণ্ডিকেটের কারণে সব দাব বড়েছে। সিণ্ডিকেট কি এতো শক্তিশালী, সরকারের চেয়ে সিণ্ডিকেট শক্তিশালী। এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারের মধ্যে সিন্ডিকেট থাকলে তাও খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি।
রওশন আরা মান্নান বলেন, দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মুল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে।
ব্যবসার আগেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, বার বার একটি কথা উঠে আসছে, আমি ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীরা আমার দ্বারা সুবিধা পাচ্ছেন। যারা এটা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলবো, তাদের রাজনীতির অভিজ্ঞতা কত বছরের তা জানি না। আমি কিন্তু ৫৬ বছর ধরে রাজনীতি করি। আমি ব্যবসা করি আজ ৪০-৪২ বছর। কিন্তু ঘুরে ফিরে কেউ বলেন না আমি রাজনীতিবিদ। তারা বলেন, আমি ব্যবসায়ী, সুযোগটা আপনি ব্যবসায়ীদের দিচ্ছেন।
মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, কথাটা হলো দাম বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বার বার বলছেন মানুষ কষ্টে আছেন। মানুষকে বলছেন সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য। আজকে আমরা কী আমাদের জন্য এই অবস্থায় এসেছি? বৈশ্বিক পরিস্থিতি আমাদের ওপর প্রভাব ফেলেছে।