নিজস্ব প্রতিবেদক:
অনিয়ম ও দূর্নীতি পিছু ছাড়ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানীকে। প্রতিষ্ঠানটির সিবিএ নেতা থেকে শুরু করে শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যন্ত সবার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০ জন সিজনাল শ্রমিককে স্থায়ী করার নামে প্রায় কোটি টাকা বানিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে সিবিএ সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ এর বিরুদ্ধে। এর নেপথ্যে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কেরুর এই অনিয়ম দূর্নীতি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শিল্প মন্ত্রনালয় ও সংসদীয় কমিটির কাছে দাবি জানিয়েছেন সংস্লিষ্টরা।
সংস্লিষ্টরা জানান, সিবিএ নেতা ও প্রতিষ্ঠানের এমডির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি জিম্মি করে রেখেছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানে ২০ জন স্থায়ী শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের এমডিসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের দেওয়ার কথা বলে সিবিএ নেতারা প্রার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে স্থায়ী ভাবে নিয়োগ হতে যাওয়া ২০ জন শ্রমিক এর মধ্যে ৫ জন রয়েছেন নতুন এবং ১৫ জন সিজনাল।
এছাড়া কেরু ডিস্টিলারি মদ চুরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাইরের কোন পার্টিকে ৫০০ কেস মদ বিক্রি করলে এর সঙ্গে আরও ১০০ কেস চুরি করে দেওয়া হয়। এই অতিরিক্ত সরবরাহের টাকার ভাগ সংস্লিষ্টরা ভাগবাটোয়ারা করে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
বিভিন্ন সুত্র জানায়, এর আগেও ২০২০ সালে কেরু চিনিকলে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরন না করে ১৩২ জন জনবল নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকার অর্থ বানিজ্য ও অনিয়ম দুর্নীর্তির কথা তুলে ধরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন সহ লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা।
একাধিক দাপ্তরিক সূত্র বলছে, কেরু এন্ড কোং-এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতির বিষ। নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা ও পণ্য উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে প্রকট রুপ ধারণ করেছে এই দুর্নীতির কালোচক্র। চলতি ঘটনাগুলো তাঁর কয়েকটি নিদর্শন মাত্র।
মদ উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ)। গেল অর্থবছরে মদসহ পাঁচটি খাতের আয়-ব্যয় সমন্বয় করে ৮৩ কোটি টাকা লাভ হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেরু কোম্পানি মোট ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার লিটার মদ উৎপাদন করেছে। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ৬১৯ লিটার বিদেশি মদ ও ৩২ লাখ ৮০ হাজার ২২০ লিটার বাংলা মদ। এছাড়া ডিনেচার স্পিরিট রেকটিফাইড স্পিরিট উৎপাদন করে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। সংস্লিষ্টরা জানান,এই লাভকে সামনে রেখে একটি সিন্ডিকেট নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।
লোক নিয়োগে অর্থ বানিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়ন-সিবিএ এর সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, তিনি প্রায় ত্রিশ বছর ধরে সিবিএ এর নেতৃত্বে আছেন। যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তারা বেশির ভাগই তার শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মিদের সন্তান। সংগঠনের সদস্যদের সন্তানদের নিয়োগের জন্য কি টাকা নেওয়া যায়। তাই টাকা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে যে অভিযোগ তা পুরোপুরি মিথ্যা।
- এবিষয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, টাকা দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। নতুন কোন শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে না। যারা সিজনাল তাদেরকে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।