- Nনিজস্ব প্রতিবেদক:
দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে মশা মারার নিন্মমানের কিটনাশক সরবরাহ করছে একটি সিন্ডিকেট। ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহক এডিস মশার লার্ভা নিধনে অকার্যকর কীটনাশক সরবরাহের পাশাপাশি প্রয়োজনের চেয়ে কম কিটনাশক দিয়ে উড়ন্ত মশা মারার ফরমুলেশন তৈরিরও অভিযোগ রয়েছে। এইডিস মশার লার্ভা নিধনের জৈব কীটনাশক ‘ব্যাসিলাস থুরিংয়েইনসিস ইসরায়েলেনসিস’ (বিটিআই) আমদানি নিয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে কয়েক মাস আগে মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কোম্পানি লিমিটেডকে ‘কালো তালিকা’ভুক্ত করার পাশাপাশি মামলা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কিন্তুু উত্তরের নিষিদ্ধ এই মার্শাল অ্যাগ্রোভেট এবার ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) মশা মারার কীটনাশক সরবরাহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
সিটি কর্পোরেশনের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের আশীর্বাদপুষ্ট নিন্মমানের কিটনাশক সরবরাহকারি সিন্ডিকেটের কারণে কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। খামার বাড়ির উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এর কয়েকজন কর্মকর্তাও এই সিন্ডিকেটে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৯ নভেম্বর মার্শাল অ্যাগ্রোভেট এর পক্ষ থেকে ডেল্ট্রামেথ্রিন নামের মশা মারার কীটনাশক সরবরাহের জন্য দরপত্র জমা দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। যার প্যাকেজ নম্বর ইজিপি/ ডিএসসিসি/ এসপিডি/২০২৩-২০২৪/০০১। প্রতিষ্ঠানটি এই কীটনাশক সরবরাহের জন্য প্রস্তাবিত দর দিয়েছে ১৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ৪৩ লাখ টাকা সিকিউরিটি মানিও জমা দেওয়া হয়েছে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনে কালোতালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটির সবকিছুই গ্রহণ করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। অন্যদিকে প্রথম সর্বোচ্চ দরদাতা বাংলামার্ক জয়েন্টভেঞ্চার কয়েক লাখ টাকা কম দরে কীটনাশক সরবরাহের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তুু দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ার পরও কর্মকর্তাদের সঙ্গে জোগসাজসে প্রতিষ্ঠানটি কিটনাশক সরবরাহের চেষ্টা করছে বলে সংস্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আর কাজ না পেলে প্রভাব বিস্তার করে দরপত্র বাতিল করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। কারণ গত মাসেও একটি দরপত্র বাতিল করা হয়েছে প্রভাবশালী একটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দরদাতা হতে না পারার কারনে। মার্শাল এগ্রোভেট এর নির্বাহী পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার সহায়তায় দরপত্র বাতিলের ব্যবস্থা করেন বলে জানা গেছে।
ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি কীটনাশক সরবাহ নিয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণা করায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজকে কালো তালিকা ভুক্ত করে মামলা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এ মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলাউদ্দিন ও নির্বাহী পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ জামিনে জেল থেকে বের হয়েছে। তবে নির্বাহী পরিচালক জেল থেকে বের হয়ে ঢাকা দক্ষিন সিটিতে কিটনাশক সরবরাহের জন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেছেন। গত প্রায় চার বছর ধরে ঢাকার দুই সিটির কিটনাশক সরবরাহের টেন্ডার নিয়ন্ত্রন করে আসছে এই প্রতিষ্ঠানটি। উত্তর সিটিতে বিটিআই সরবরাহে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ার পর কোম্পানীটি আলোচনায় এলেও তাদের বিরুদ্ধে উড়ন্ত মশা মারার নিন্মমানের ওষুধ সরবরাহেরও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশিরুল হক ভুইয়া বলেন, মার্শাল এগ্রোভেট প্রতিষ্ঠানটি অন্য সিটি করপোরেশনে নিষিদ্ধ হলেও তাদের এখানে নিষিদ্ধ হয়নি। তাই দরপত্রে অংশ নিতে কোনো সমস্যা নেই। তিনি বলেন, ডিএসসিসিতে কিটনাশক ক্রয়ের ক্ষেত্রে ইজিপির মাধ্যমে দরপত্র আহবান করে যথাযথ মূল্যায়ন করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দরপত্র দাখিলকারি প্রতিষ্ঠানের আমলনামা দেখে দরপত্র মুল্যায়ন কমিটি ও মেয়র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাই ডিএসসিসির দরপত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা থাকে। এখানে কোন সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেওয়ার সুযোগই নেই।