সংসদ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ এখন অতটা খারাপ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ডলারের সংকট এখন ঠিক সেরকম নেই, রপ্তানি আয়ও খুব একটা কমেনি। দেশের অবস্থা অতোটা খারাপ নয়। সরকার সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। বুধবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় পড়ে গেলাম। ফলে আমাদের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমাদের কিছু খরচের ব্যাপারে মিতব্যয়ী হতে হয়েছে, কিছুটা সংকুচিত করতে হয়েছে। ডলারের সংকট যথেষ্ট ছিল, এখন ঠিক সেরকম সংকট নেই। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা মনিটরিং বাড়িয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে যতটা প্রয়োজন নয়, তার চেয়ে বেশি দিয়েও অনেকেই এলসি খুলে, কিন্তু ওই টাকাটা ফেরত আসে না। এ কারণে সরকার পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ব্লুমবার্গের মূল্য তালিকা দেখে, তা মনিটর করে এলসি খুলতে দেয়। আগে যেভাবে যখন-তখন এলসি খোলা হতো। এখন ইচ্ছেমতো হচ্ছে না, সেটাতে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে।
রপ্তানি আয় খুব একটা কমেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব দেশে আমরা রপ্তানি করি, এমনকি যেগুলো খুব ধনী দেশ, তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, বাজার সংকুচিত হয়েছে, সেখানে অর্ডার কমেছে। অর্থনৈতিকভাবে তারা খুব চাপে আছে, তাদের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তারই ফলে হয়তো কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিকল্প বাজার খুঁজে বেড়ানো, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে ব্যবস্থা নিয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কৃষক যথাযথ উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না পেলে সমস্যা হবে। মূল্য বাড়লে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ কষ্ট পাবে।
নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় ১৩ জন নিহত: আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবদুল্লাহের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ করতে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা গত বছর ২৮ অক্টোবর থেকে সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে ৬শতাধিক যানবাহনে ভাংচুর করেছে। এরমধ্যে ১৮৪টি যাত্রিবাহী বাস, ৪৮টি ট্রাক, ২৮টি কাভার্ড ভ্যান, মালবাহী লরি ও কনটেইনার, ৩টি সিএনজি, ৪টি প্রাইভেট কার এবং ১১টি পিক আপ ভ্যান রয়েছে। এছাড়া সর্বমোট ৩২৮টি যানবাহন ও প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরমধ্যে একটি বৌদ্ধ মন্দির (রাম-কক্সবাজাব, ৫টি ট্রেন, একটি নৌকা, ১৫টি মোটর সাইকেল, ৩টি লেগুনা, একটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস (মধ্যরামপুরা, ফেনী) এবং একটি অটোরিক্সা রয়েছে। তিনি আরো জানান, ওই সময়ে নাশকতার ঘটনার ১৩ জন নিহত হয়েছে। জানান, অগ্নি-সন্ত্রাস, নাশকতা, অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড প্রভৃতি অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশে দক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা ও প্রচলিত আইন রয়েছে। হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বিভিন্ন আইনী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জীবনচিত্র পাল্টে দিয়েছে পদ্মা সেতু : পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থসামাজিক জীবন চিত্র পাল্টে দিয়ে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি জানান, দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার সাথে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের পর থেকে সেতু পারাপারকারী যানবাহন হতে চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট এক হাজার ২৭০ কোটি ৮১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। দৈনিক গড় আয় প্রায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা।