নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিয়ে প্রথম অধিবেশন শুরুর মধ্য দিয়ে যাত্রা করল বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতে টানা চতুর্থবার জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হয়ে নিজের গড়া রেকর্ড নিজেই ভেঙ্গেছেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। কারণ এর আগে টানা তৃতীয় বার স্পিকার নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন দেশের এই প্রথম নারী স্পিকার।
সংসদে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্পিকার হিসেবে শিরিন শারমিন চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করলে চীফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। স্পিকার হিসেবে অন্য কোনো মনোনয়ন না থাকায় কণ্ঠভোটে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন। এরপর সংসদ ২০ মিনিটের জন্য সংসদ মুলতবি করা হয়। এসময় সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নতুন স্পিকারের শপথ পড়ান। পরে শিরীন শারমিন অধিবেশনে এসে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। ডেপুটি স্পিকার পদে শামসুল হক টুকুর নাম প্রস্তাব করেন হুইপ এবি তাজুল ইসলাম ও সমর্থন করেন মকবুল হোসেন। প্রস্তাবটি ভোটে দিলে সংসদ সদস্যরা ‘হ্যাঁ’ বলে সমর্থন জানান। পরে ডেপুটি স্পিকারকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। স্পিকার নির্বাচনের সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ সরকারি ও বিরোধী দলের প্রায় সকল সংসদ সদস্য সংসদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
নবম সংসদের শেষ দিকে জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে শূন্য হয় স্পিকারের আসন, সেই স্থানে আসেন সংসদ সদস্য শিরীন শারমিন। সেবার প্রথমবারের মতো আইনসভায় এসে চার বছরের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই সংসদ প্রধানের পদে বসেন তিনি। আর এই পদে তিনি প্রথম নারী।
শিরীন শারমিন চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এলএলবি (অনার্স) এবং ১৯৯০ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের এসেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে ‘দ্য রাইট টু লাইফ’, অর্থাৎ মানুষের জীবনের অধিকার, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক আইন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে জনস্বার্থ, মানবাধিকার ও সংবিধানবিষয়ক বিভিন্ন মামলা পরিচালনা করেছেন। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন মামলার প্যানেল আইনজীবী ছিলেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শিরীন শারমিন চৌধুরী নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল দেশের প্রথম নারী স্পিকার নির্বাচিত হন শিরীন শারমিন। এর পর থেকে টানা তিনি এই দায়িত্বে আছেন।