নিজস্ব প্রতিবেদক:
নবম জাতীয় পে-স্কেল ঘোষনা, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে অর্থের সংস্থান রাখা এবং সর্বনিম্ন বেতন-ভাতা ত্রিশ হাজার টাকা করাসহ ৬ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন।
১১ মে শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। অন্য দাবিগুলো হচ্ছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল ভাতা হিসেবে প্রদান করা, বিনা সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান, টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড পূর্ণবহাল, আউট সোর্সিং প্রথা বাতিল এবং সচিবালয়ের ন্যায় এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করা। সরকারি কর্মচারিদের চলমান বৈষম্য ও অসংগতি দূরীকরণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সরাসরি স্বাক্ষাৎসহ ছয় দফা দাবি দ্রুত মেনে নেওয়ার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ খলিলুর রহমান ভূঞা। সরকারি কর্মচারিদের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈষম্য ও অসংগতির চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সাংবাদিকগণের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ আকতার হোসেন। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর নির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আবুল বাশার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় ৬ দফা সম্বলিত স্মারকলিপি আগামী ১৫ মে প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রদান করা হবে। দাবি বাস্তবায়নে সরকারের কাছ থেকে আশানুরুপ সাড়া না পেলে পরবর্তীতে আন্দোলনের কর্মসুচী ঘোষনা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি মোঃ মহসিন ভূইয়া, মোঃ সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ, আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ঢাকা মহানগর নির্বাহী পরিষদের সভাপতি মোঃ বাহার উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নজির আহমেদ ভূইয়া, মাহবুব আলম, জহুরুল হক, মোঃ আব্দুল করিম, মোঃ আশিকুর রহমান, মোঃ শফিউল বাশার, মোঃ সেলিম রেজা, মোঃ কামরুজ্জামান উজ্জল, তহুরা খানম, বোরহান উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, মহানগর কমিটির কার্যকরী সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম ও মোঃ আমির হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক বি. এম. রবিউল ইসলাম ও মোঃ আশরাফ ছরোয়ার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাছির উদ্দিন চৌধুরী, মোঃ তানজির হোসেন, মোঃ কামাল হোসেন, মোঃ সাইদুর রহমান চৌধুরী, মোঃ শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস, মাহমুদা আক্তার রেখা, শেখ নাজমুল ইসলাম শাহীন, মোঃ মাসুদ রানা, মোঃ রেজাউল করিম, মোঃ মাহে আলম, রওশন আরা রুবি, মোঃ হাবিবুল্লাহ, মোঃ আব্দুল হান্নান, মোঃ রাহিদুর রহমান রাহী, মোছাঃ ফেরদৌসী আক্তার, বেগম নূরুন নাহার, মোঃ শাহবুদ্দিন আহম্মেদ প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারন সম্পাদক বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের পর ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার জাতীয় বেতন স্কেলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য ১০ টি গ্রেডের একটি সুষম বেতন কাঠামো উপহার দেন। দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বরণের পর ১৯৭৭ সালের বেতন স্কেলে ১০টি গ্রেডের পরিবর্তে ২০টি গ্রেডে বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করে বৈষম্যের সূত্রপাত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালে সচিবালয়ের সাথে সচিবালয়ের বাহিরের কর্মচারীদের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে এ বৈষম্যকে আরেক দফা বৃদ্ধি করা হয়। এরপর থেকেই শোষণ আর বৈষম্যকে ঘিরে কর্মচারীদের ন্যায্য আন্দোলন-সংগ্রাম চলতে থাকলেও তার অবসান না হয়ে বরং বিভিন্ন কৌশলে এ বৈষম্যকে আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়
২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দিন বদলের কর্মসূচীকে সফল করার লক্ষ্যে রূপকল্প ২০২০-২১ বাস্তবায়নে ব্যাপক জনমত নিয়ে যাত্রা শুরু করলে আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত দিয়ে এ বৈষম্যের অবসান হবে, কিন্তু আমাদের সে স্বপ স্বপ্নই থেকে গেল। সর্বশেষ ৮ম জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণার প্রাক্কালে আমরা পুনরায় বৈষম্যের শিকার হলাম। বেতন দ্বিগুন করার ঘোষণা দিয়ে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা হলো একদিকে, অন্যদিকে এ ষোষণার আড়ালে টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড বাতিল করে বঞ্চিত করা হলো কর্মচারীদের। শুধু তাই নয় অতীতের নিয়মিত ০৩ টি টাইম স্কেল পেয়ে ১৬ তম বছরে আমাদের বেতন বৃদ্ধির তুলনায় বর্তমান নিয়মে ১৬ তম বছরে আমাদের উল্টো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন করা হলো।
৮ম জাতীয় বেতন স্কেলে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীগণকে শতকরা হারে বেতন বৃদ্ধি দ্বিগুন দেখানো হলেও টাকার অংকে আর্থিক সুবিধা খুবই নগন্য ছিল। এ বৈষম্য দূরীকরণে কর্মচারীদের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট বহু আবেদন নিবেদন করার পর দীর্ঘ ৫ বছর পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বিষয়টি উপলদ্ধি করে এ বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। দুর্ভাগ্য যে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরিত প্রস্তাবটি আজও আলোর মুখ দেখেনি।
উপরোক্ত অবস্থায় আয়-ব্যয়ের এ অসংগতি, প্রজাতন্ত্রের ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের যাবতীয় বৈষম্য দূরীকরণে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে আপনাদের সংবাদ মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহায়তায় এগিয়ে আসবেন এই প্রত্যাশা রাখছি।
৬ দফা দাবী সমূহ:
১. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ১৯৭৩ সনের জাতীয় বেতন স্কেলের অনুরূপ ১০ (দশ) ধাপ বিশিষ্ট বেতন স্কেল নির্ধারণ-পূর্বক ০৬ (ছয়) সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের ব্যয় বিবেচনায় সর্বনিম্ন বেতন-ভাতা ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা করতে হবে। এ দাবী বাস্তবায়নে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রেখে নবম জাতীয় পে-কমিশন গঠন করতে হবে।
সচিবালয়ের ন্যায় প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারীদের পদ-পদবি ও গ্রেড পরিবর্তন সহ এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করতে হবে। সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়স সীমা ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) ও অবসরের বয়সসীমা ৬২ (বাষট্টি) বছর করতে হবে।
২. শতভাগ পেনশন প্রদান, স্বেচ্ছায় অবসর ২০ বছর নির্ধারণ এবং আনুতেষিক প্রতি ০১ (এক) টাকায় ৩০০/- (তিনশত) টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
৩. ব্লক পদ প্রথা প্রত্যাহার, পদোন্নতিযোগ্য পদ শূণা না থাকলেও নির্ধারিত সময়ের পর উচ্চতর পদের বেতন স্কেল প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীদেরকে যৌক্তিকভাবে ঝুঁকিভাতা প্রদান করতে হবে এবং সকল শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ প্রদান করতঃ আউট সোর্সিং নিয়োগ প্রথা বিলুপ্ত করতে হবে;
৪. প্রজাতন্ত্রের ১১-২০ গ্রেডভূক্ত কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হার ৫% এর পরিবর্তে ২০% এ উন্নীত করতে হবে। টাইম স্কেল- সিলেকশন গ্রেড, টেকনিক্যাল কর্মচারীদের জন্য দু’টি বিশেষ ইনক্রিমেন্ট পুনর্বহাল, বাড়ীভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, টিফিন ভাতা, যাতায়াত ভাতা, শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে পাশাপাশি বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল ভাতা হিসেবে প্রদান, স্বল্প মূল্যে রেশনিং পদ্ধতি চালু করন সহ বিনা সুদে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গৃহ ঋণ প্রদান করতে হবে।
৫. প্রজাতন্ত্রের ১১-২০তম গ্রেডভূক্ত কর্মচারীদের জন্য সকল নিয়োগে ৩০% পোষ্য কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। অফিসার্স ক্লাব, বিএমএ, কেআইবি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এর মতো চাকুরিরত ও অবসর প্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্য রাজধানীতে একটি কর্মচারী কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে।
৬. মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কর্মচারী প্রতিনিধিদের সরাসরি সাক্ষাৎ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪ এ দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতনকাঠামো নির্ধারণ করা হবে মর্মে যে অঙ্গিকার করা হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
উপরোক্ত ৬ দফা দাবী আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সদয় সরাসরি সাক্ষাৎ প্রার্থনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
##