নিজস্ব প্রতিবেদক:
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘উপকূলীয় অঞ্চলে মৎস্য সম্পদের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার ২০ মে খুলনা গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। এই সেমিনারের আমন্ত্রনপত্রে দুজন মৎস্য চাষীর ছবি ছাপানো হয়েছে যার একজন হচ্ছে বটিয়াঘাটার প্রফুল্ল কুমার রায়। তিনি গত ২৫ জুলাই মাসে খুলনায় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সফল মাছ চাষী হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন। সংস্লিষ্টরা জানান, এই প্রফুল্ল কুমার রায় বটিয়াঘাটায় মৎস্য চাষ ও ব্যবসা করলেও তিনি ভারতেও নাগরিক। তার ছেলেও ভারতের নাগরিক হিসেবে সেখানে ব্যবসা করেন। অথচ একজন ভারতীয় নাগরিককে বার বার পুরস্কৃত করছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি সার্কভুক্ত দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকতে পারেন না।
প্রফুল্ল কুমার রায় ভারতের নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ পরিচয়পত্র নিয়েছেন ২০০৭ সালের ৯ আগস্ট। আইডি নম্বর এলএলকিউ ২৫৩৪২৮৭। কার্ডে প্রফুল্ল কুমার রায়ের পিতার নাম লেখা আছে অনিল রায়। জন্ম ১৯৫৩ সাল। উত্তর ২৪ পরগনার গোকুলপুর উত্তরাংশের উত্তরপাড়া ঠিকানা দেখানো হয়েছে কার্ডে। ভারতে তার ছেলেরও রয়েছে ফিশফিড ফ্যাক্টরি।
অভিযোগ রয়েছে প্রফুল্ল কুমার রায় সরকারী দলের একজন মন্ত্রী ও নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে খাসজমি বরাদ্দ নিয়ে মৎস্য চাষের পাশাপাশি জনবসতি এলাকায় অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ করেছেণ। এলাকার একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন খাসজমিতে গড়ে তোলা ফিশ ফিড বিক্রি করে টাকা ভারতে পাচারের তৎপরতা শুরু করেছেন। এর আগে কৈয়া ব্রীজের পাশে খাসজমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইটভাটা বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি র্যাবের হাতে একবার আটকও হয়েছিলেন।
প্রফুল্ল রায় ১৯৭৩ সালে ভারতে চলে যান। তখন ভারতে গিয়ে ভারতের ট্রেন স্টেশনে কখনো লেবু, কখনো শসা বা পেয়ারা বিক্রি করেন। পরবর্তীতে দেশে ফিরে তিনি ১৯৯২ সালে পাথরের ব্যবসা ও ১৯৯৫ সালে ডুমুরিয়ার সীমান্তবর্তি কৈয়া এলাকায় ইট ভাটার ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি মাছের খাদ্য উৎপাদন এবং চিংড়ি চাষ শুরু করেন।
এলাকাবাসী বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এবং দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দুদক এর মাধ্যমে তদন্ত করারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রফুল্ল কুমার রায় বলেন, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। ভারতের নাগরিক তিনি নন। তার ছেলে ভারতে বৈধভাবেই ব্যবসা করছেন। আর খুলনায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সব নিয়ম মেনে করেছেন।
প্রফুল্ল কুমার রায়কে মৎস্য পুরস্কার প্রদান এবং সেমিনারের আমন্ত্রনপত্রে তার ছবি ছাপানোর বিষয়ে খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, তিনি ভারতীয় নাগরিক এরকম কোন তথ্য তাদের কাছে নেই। খুলনার একজন সফল মৎস্যচাষী হিসেবে তাকে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। খাসজমিতে মৎস্য চাষ করেছেন কিনা এটা তাদের দেখার বিষয় না।
##