নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩টি আসনের জন্য ৭৫১টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও জয় পেয়েচে ৪১টি দলের প্রার্থীরা। ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, ২৪০ আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। অন্য দলগুলোর মধ্যে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ৩৭টি, তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টি, ডিএমকে ২২টি, তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ১৬টি, জনতা দল (জেডি-ইউ) ১২টি, শিবসেনা (উদ্ভব) নয়টি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপিএসপি) আটটি ও শিবসেনা (এসএইচএস) সাতটি আসনে জয় পেয়েছে।
পাঁচটি আসন পেয়েছে লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিলাস)। চারটি করে আসনে জয় পেয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট)- সিপিআই (এম), ওয়াইএসআরসিপি ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)।
আম আদমি পার্টি, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) ও ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ (আইইউএমএল) তিনটি করে আসন পেয়েছে। এছাড়া কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই), কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) (লিবারেশন) সিপিআই (এমএল), জনতা দল-জেডি (এস), জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স (জেকেএন), রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি), জনসেনা পার্টি (জেএনপি) ও ভিসিকে দুটি করে আসনে জয় পেয়েছে।
একটি করে আসনে জয় পেয়েছে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, লিবারেল–ইউপিপিএল, অসম গণ পরিষদ এজিপি, হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (সেক্যুলার)–এইচএএমএস, কেরালা কংগ্রেস কেইসি, রেভল্যুশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টি-আরএসপি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি- এনসিপি, ভয়েস অব দ্য পিপল পার্টি-ভিওটিপিপি, জোরাম পিপলস মুভমেন্ট -জেপিএম, শিরোমনি আকালি দল -এসএডি, রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি-আরএলটিপি, ভারত আদিবাসী পার্টি, সিকিম ক্রান্তিকারি মোর্চা-এসকেএম, মারুমালার্চি দ্রাবিড় মুনেত্র কাজাগম -এমডিএমকে, আজাদ সমাজ পার্টি (কাশীরাম)-এএসপিকেআর, আপনা দল (সোনেলাল) -এডিএএল, অল ঝাড়খন্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন-এজেএসইউপি এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস ইত্তেহাদুল মুসলিমিন-এআইএমআইএম। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাতজন।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স–এনডিএ জোটের মোট আসনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯৩টি। অপর দিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স–ইন্ডিয়া জোটের মোট আসনসংখ্যা হয়েছে ২৩৩টি।
এর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে ৩০৩ আসনে জয় পেয়েছিল। সেবার বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ৩৫২ আসনে জয় পায়। এবার বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি। সে ক্ষেত্রে এনডিএ জোট শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে। গত নির্বাচনে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছিল ৫২টি আসন। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইউপিএ জোট পেয়েছিল ৯৪ আসন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়। সাত দফার এই নির্বাচন শেষ হয় ১ জুন।
লোকসভায় পা দিতে চলা সাংসদদের ৫২ শতাংশই প্রথম সাংসদ। টিভি সিরিয়াল রামায়ণে রামের ভূমিকায় অভিনয় করা অভিনেতা অরুণ গোভিল, দলিত অধিকার কর্মী চন্দ্রশেখর আজাদ এবং প্রাক্তন যদুবীর কৃষ্ণদত্ত চামারাজা ওয়াদিয়ার লোকসভার প্রথম মেয়াদের ২৮০ জন সদস্যের মধ্যে রয়েছেন।সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনে ৫৪৩ সদস্যের সংসদের নিম্নকক্ষে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যসভার সদস্য, উদ্যোগপতি এবং এমনকি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতিও প্রথমবারের মতো প্রবেশ করতে চলেছেন।
লোকসভায় ৮০ জন সদস্য পাঠানো বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশে ৪৫ জন প্রথমবারের সদস্য রয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন মীরাট আসন থেকে বিজেপির গোভিল, আমেঠিতে বিজেপির স্মৃতি ইরানিকে পরাজিত করা কংগ্রেসের কিশোরী লাল শর্মা এবং নাগিনা আসন থেকে আজাদ সমাজ পার্টির চন্দ্রশেখর আজাদ।
মহারাষ্ট্র, যেখানে বিজেপি নির্বাচনে ভরাডুবির মুখোমুখি হয়েছিল, সেখানে স্কুল শিক্ষক ভাস্কর ভাগরে সহ ৩৩ জন প্রথমবারের সদস্য রয়েছেন, যাঁকে এনসিপি-শারদচন্দ্র পাওয়ার দিন্দোরির আদিবাসী আসন থেকে প্রার্থী করেছিলেন। ভাগরে বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভারতী পাওয়ারকে পরাজিত করেন।
মহারাষ্ট্র থেকে প্রথম মেয়াদের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির পীযূষ গোয়েল, যিনি মুম্বাই উত্তর থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হন। অমরাবতী থেকে বিজেপির নভনীত রানাকে পরাজিত করেন কংগ্রেস নেতা বলবন্ত ওয়াখেড়ে। আকোলা থেকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সঞ্জয় ধোত্রের ছেলে বিজেপি প্রার্থী অনুপ ধোত্রে। এবং সাঙ্গলি থেকে নির্দল প্রার্থী বিশাল পাতিল।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ রানে (রত্নগিরি-সিন্ধুদুর্গ), ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত (হরিদ্বার), মনোহর লাল (কার্নাল), বিপ্লব কুমার দেব (ত্রিপুরা পশ্চিম), জিতন রাম মাঝি (গয়া), বাসবরাজ বোম্মাই (হাভেরি), জগদীশ শেট্টার (বেলগাম) এবং চরণজিৎ সিং চান্নি (জলন্ধর) লোকসভার প্রথমবারের ২৮০ জন সদস্যের মধ্যে রয়েছেন। অভিনেতা সুরেশ গোপী (ত্রিশূর), কঙ্গনা রানাওয়াত (মান্ডি), জুন মালিয়া (মেদিনীপুর), সায়নী ঘোষ (যাদবপুর) এবং রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় (হুগলি) প্রথমবার লোকসভায় প্রবেশ করবেন।
রাজ্যসভার সদস্য অনিল দেশাই (শিবসেনা ইউবিটি), মিশা ভারতী (আরজেডি), ভূপেন্দ্র যাদব, ধর্মেন্দ্র প্রধান, মনসুখ মাণ্ডব্য এবং পুরুষোত্তম রুপালা (সমস্ত বিজেপি) লোকসভায় চলে পা রাখবেন। ছত্রপতি সাহু (কোলাপুর), যদুবীর কৃষ্ণদত্ত চামারাজা ওয়াদিয়ার (মহীশূর) এবং কৃতি দেবী দেববর্মন (ত্রিপুরা পূর্ব) প্রথমবার লোকসভায় প্রবেশ করবেন। পশ্চিমবঙ্গের তমলুক লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও প্রথমবারের মতো সাংসদ হতে চলেছেন।
উদ্যোগপতি উদয় শ্রীনিবাস টাঙ্গেলা, যিনি চা টাইম উদয় নামেও পরিচিত, কাকিনাড়া থেকে প্রথমবারের মতো লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম মেয়াদের তরুণ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ২৫ বছর বয়সী শাম্ভবী (এলজেপি-আরভি-সমস্তিপুর), ২৬ বছর বয়সী সাগর খান্দ্রে (কংগ্রেস-বিদার), ২৭ বছর বয়সী প্রিয়াঙ্কা জারখিহোলি (কংগ্রেস-চিক্কোডি), ২৬ বছর বয়সী সঞ্জনা জাতভ (কংগ্রেস-ভরতপুর) এবং ৩১ বছর বয়সী রাজকুমার রোট (ভারত আদিবাসী পার্টি-বানসওয়ারা)।
দুরাই ভাইকো (তিরুচিরাপল্লী), কে এন অরুণ নেহরু (পেরাম্বালুর), এস মুরাসোলি (তাঞ্জাভুর), এটালা রাজিন্দর (মালকাজগিরি), উজ্জ্বল রমন সিং (এলাহাবাদ) এবং ইউসুফ পাঠান (বহরমপুর) লোকসভার প্রথম মেয়াদের সদস্য।