নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিসিএস (পাবলিক ওয়ার্কস) ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের মেধা তালিকার প্রথম স্থানে থাকা আশরাফুল আলম এর বাড়ি বগুড়া হওয়ার কারনে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পাননি। সংস্থাটির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমকে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার কয়েক মাস পরেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ৬ জনকে ডিঙ্গিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শামীম আখতারকে। বিতর্কিত এই প্রকৌশলী প্রায় চার বছর ধরে তিনি গুরুত্বপূর্ন (গ্রেড-১) এই পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। আর মেধা তালিকায় প্রথম স্থানে থাকা আশরাফুল আলমকে ডাম্পিং পোস্টিং হিসেবে হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটে মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়।
অথচ ভারপ্রাপ্ত বা চলতি দায়িত্বে ৬ মাসের বেশি থাকা যাবে না বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং এর অধীন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও বিভিন্ন কর্পোরেশনের শূন্যপদে কর্মকর্তাদের ভারপ্রাপ্ত বা চলতি দায়িত্ব দিতে হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে এবিষয়ে আদেশ বা প্রজ্ঞাপন জারি করবে। চলতি দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে পদোন্নতির জ্যেষ্ঠতা সংক্রান্ত গ্রেডেশন তালিকা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং এক্ষেত্রে চাকরি সন্তোষজনক থাকলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী তার আগের পদের দায়িত্ব হস্তান্তর করে চলতি দায়িত্বের পদে যোগ দেবেন। চলতি দায়িত্বের মেয়াদ হবে ৬ মাস। এর বেশি সময় কাউকে চলতি দায়িত্ব প্রদানের দরকার হলে ৬ মাস শেষ হওয়ার আগেই পদোন্নতি কমিটি বা বোর্ডের অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়া কোন কোনো পদ সাময়িকভাবে শূন্য হলে সম্পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া যাবে। এমন বিধান রেখে শূন্যপদে কর্মকর্তাদের চলতি দায়িত্ব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান নীতিমালা-২০২৩ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদউল্লাহ খন্দকারের অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেয়ায় এবং বাড়ি বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় হওয়ায় চলতি দায়িত্ব পাওয়ার পর পদোন্নতি না দিয়ে আশরাফুল আলমকে ১১ মাসের মাথায় অপসারণ করা হয় যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও নীতি বিরোধী। শুধু তাকে অপসারণ করে ক্ষান্ত হয়নি ২৪ ঘন্টার নোটিশে প্রধান প্রকৌশলীর বাসভবনের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দিয়ে রাতের অন্ধকারে তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। যা অমানবিক এবং মানবতা বিরোধী। তার একটাই অপরাধ মেধাবী হয়েও তিনি জন্মেছিলেন বগুড়ায়। অথচ অনিয়ম দুর্নীতি করেও আজও দুর্নীতিবাজ সচিব শহিদুল্লা খন্দকারের দোসর শামীম আখতার চার বছর ধরে লুটেপুটে খাচ্ছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সম্প্রতি রমনা পার্কের ভেতরের চাইনিজ রেস্টুরেন্টের টেন্ডারে প্রথমজনকে না দিয়ে মোটা অংকের বিনিময়ে সালমান এফ রহমানের ক্যাডার তৃতীয় দরদাতা ব্যক্তিকে রেস্টুরেন্ট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় অতীতের সকল রেকর্ড ভংগ করেছেন গনপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার।
এদিকে পদোন্নতি বন্চিত আশরাফুল আলম ১৯৬৭ সালের ৩১ জানুয়ারী বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার দিগদাইড় গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমান রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে মেধাতালিকায় প্রথম শ্রেণীতে ২য় হিসাবে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও ২০০৯ সালে তিনি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ১৫ তম বিসিএস (পাবলিক ওয়ার্কস) ক্যাডারের মেধাতালিকায় প্রথম হিসাবে ১৯৯৫ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন।