নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন। একই সঙ্গে আরও চার কমিশনারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সার্চ কমিটির প্রস্তাব করা নামের তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি এই পাঁচজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বেছে নেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বৃহস্পতিবার এবিষয়ে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। নতুন এই কমিশনের ওপর পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব থাকবে। দেড় মাস ধরে শূন্য থাকা নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা কবে শপথ নেবেন, সেই তারিখ এখনো জানানো হয়নি।
দেশের চতুর্দশ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাবেক সচিব নাসির উদ্দীনকে অন্তর্র্বতী সরকার সম্প্রতি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিল। এবার তাকে দেওয়া হল নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নাসির উদ্দীনের বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করে তিনি পেশাজীবন শুরু করেন শিক্ষক হিসেবে।
জানা গেছে সিইসি হিসেবে বিএনপি যে দুজনের নাম প্রস্তাব করেছিল, তার মধ্যে এ এম এম নাসির উদ্দীনের নাম ছিল। তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বিসিএস ১৯৭৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। সিইসি পদে বিএনপির দেওয়া তালিকায় আরেক নামটি ছিল শফিকুল ইসলাম। বিএনপি চলতি মাসের শুরুতে অনুসন্ধান কমিটির কাছে এ তালিকা দিয়েছিল। এছাড়া বিএনপির মিত্রদলগুলোর বেশির ভাগের তালিকাতেও সিইসি পদের জন্য এ দুটি নাম ছিল।
নিয়োগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ এম এম নাসির উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তা তা করব ইনশাআল্লাহ। এ দায়িত্ব যখন আসছে, আমাদের সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে সবার সহযোগিতা নিয়ে।
প্রসঙ্গত, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গঠিত কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে। সেই কমিশনে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান। তাদের অধীনেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে গত জানুয়ারিতে সেই নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তার আট মাসের মাথায় গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। দেশে এর আগে ১৩ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং ৩১ জন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের অধিকাংশই নাসির উদ্দীনের মত অবসরপ্রাপ্ত আমলা। এবার নিয়ে টানা পঞ্চমবার সিইসি পদে নিয়োগ পেলেন সাবেক সচিব, যার শুরু হয়েছিল এ টি এম শামসুল হুদার মাধ্যমে। শামসুল হুদার আগের কমিশনে একজন বিচারক থাকলেও তার আগে আবার ছিলেন আমলা।
১৯৭২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতিরা। এরপর ইসিতে শুরু হয় সাবেক আমলাদের নেতৃত্ব। মাঝখানে ২০০৫ সালে এক বছর সাত মাস একজন বিচারপতি ছাড়া গত প্রায় তিন দশক সাবেক আমলারাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, কে এম নূরুল হুদা: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, এ টি এম শামসুল হুদা: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি, বিচারপতি এম এ আজিজ: ২৩ মে ২০০৫ থেকে ২১ জানুয়ারি ২০০৭, এম এ সাইদ: ২৩ মে ২০০০ থেকে ২২ মে ২০০৫, মোহাম্মদ আবু হেনা: ৯ এপ্রিল ১৯৯৬ থেকে ৮ মে ২০০০, বিচারপতি এ কে এম সাদেক: ২৭ এপ্রিল ১৯৯৫ থেকে ৬ এপ্রিল ১৯৯৬, বিচারপতি আব্দুর রউফ: ২৫ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ১৮ এপ্রিল ১৯৯৫, বিচারপতি সুলতান হোসেন খান: ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯০, বিচারপতি চৌধুরী এ টি এম মাসউদ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০, বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম: ৮ জুলাই ১৯৭৭ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫,বিচারপতি মো. ইদ্রিস: ৭ জুলাই ১৯৭২ থেকে ৭ জুলাই ১৯৭৭। সিইসির দায়িত্বে বিচারপতিদের মধ্যে মো. ইদ্রিস ও এটিএম মাসউদ এবং সাবেক আমলাদের মধ্যে এম এ সাঈদ, শামসুল হুদা, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও নূরুল হুদা পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছেন।