নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠানো হবে, যেন কমিশন আগামী রমজান মাস শুরুর আগে ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৫ আগষ্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেছেন। তবে নির্বাচন কমিশন সুত্র জানিয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ও ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের তারিখ হিসেবে নির্ধারিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ভোটের পর যেন দুই দিন ছুটি থাকে এ রকম চিন্তাভাবনা থেকে ভোটের দিন হিসেবে বৃহস্পতিবারকেই উপযুক্ত মনে করে ইসি।
ইতোমধ্যেই সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের খসড়া প্রস্তাবনা প্রকাশিত হয়েছে। ৩৯টির সীমানায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছে ইসি। আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত এগুলোর ওপর আপিল আবেদন গ্রহণ করা হবে। এরপর আপিল শুনানি শেষে তা নিষ্পত্তি করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে ইসি। নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে আগামী ১০ আগস্ট হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করবে ইসি। খসড়া ভোটার তালিকায় কারও তথ্যে ভুল থাকলে সংশোধন করা যাবে পরবর্তী ১২ দিনের মধ্যে।
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে শতাধিক দলের আবেদনে ত্রুটি ও প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে বেধে দেওয়া সময় রবিবার শেষ হয়েছে। এখন চূড়ান্ত যাচাই বাছাই শেষে চলতি মাসেই নতুন দলগুলোর নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫ জারি করেছে ইসি। নির্বাচনী আচারণবিধির খসড়াও চূড়ান্ত পর্যায়ে। নির্বাচন ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান। আরপিওসহ আইন ও বিধিমালাগুলো সংশোধনের জন্য সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে ইসি। আগামী নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়টিও চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে ইসি। নির্বাচনকে ঘিরে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের রদবদল শুরু করেছে ইসি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে ৪৭ হাজার কেন্দ্রে একটি করে বডি-ওর্ন (শরীরে বহন উপযোগী) ক্যামেরা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। পুলিশের মধ্যে যিনি সিনিয়র পদধারী থাকবেন, তার কাছে বডি-ওর্ন ক্যামেরা থাকবে। বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন-বিষয়ক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সভায় সারা দেশের নির্বাচন পরিচালনার জন্য কত ফোর্স প্রয়োজন হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা ৮ লাখের মতো থাকবে। এর মধ্যে পুলিশ, আনসার থেকে শুরু বিজিবি, সেনাবাহিনী পর্যন্ত থাকবে। সব বাহিনীকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রিসাইডিং অফিসাররা যেন কারও বাসায় না থেকে নির্বাচনি কেন্দ্রে থাকতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হবে। তাদের সঙ্গে আনসার এবং পুলিশ সবাই থাকবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন কমিশন পোলিং অফিসার এবং প্রিসাইডিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেবে। বাহিনীগুলোর প্রশিক্ষণের পর তাদের মহড়া দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে। নির্বাচনটা যাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভালোভাবে হতে পারে, সে অনুশীলন করা হবে।
নির্বাচনি দিকনির্দেশনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার চিঠির অপেক্ষায় থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভোটের তারিখের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। বুধবার সংবাদ সম্মেলন ডাকেন সিইসি। নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে ভোটের প্রস্তুতি তুলে ধরেন।
সিইসি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ আগামী কয়েক মাসে আরও উন্নত হবে। এখন কোনো সমস্যা দেখছি না। ফেব্রুয়ারিতে ভোট হলে এ সময়ের মধ্যে জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা, দলগুলোর আস্থা অর্জন, ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণই চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, এখন তো সেই অবস্থা নেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ইমপ্রুভ করে গেছে। ভোট তো আরও কয়েক মাস আছে। এর মধ্যে দেখবেন যে ইনশল্লাহ এভ্রিথিং ইন প্লেস এবং আমার বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিটা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা একটা ঘোষণা দিয়েছেন। উনি বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে রমজানের আগে ইলেকশন করার জন্য আমাদেরকে একটা চিঠি দেবেন। আমি প্রত্যাশা করছি দ্রুত চিঠিটা পেয়ে যাবো। কারণ উনার কথার মধ্যে আমরা তো বুঝতে পারি যে খুব দ্রুতই চিঠিটা আমরা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। চিঠি এখনই না এলেও ঘোষিত সময়সীমা ধরে প্রস্তুতি চলমান থাকবে। চিঠি না পেলেও বেশ কয়েকদিন ধরে আলোচনা ছিল ইলেকশনের তারিখ নিয়ে। আমাদের প্রস্তুতি আমরা অনেক আগের থেকে নিচ্ছি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছি ইনশআল্লাহ। আমাদের কোনো প্রস্তুতিতে ঘাটতি হবে না।