ঠিকাদারের ব্যর্থতা ঢাকতে গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে হয়রানি!

 

নিজস্ব প্রতিবেদক
যথা সময়ে কাজ শেষ না করে ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সংস্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করেও কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এজন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ঠিকাদার মোনায়েম কবিরকে দায়ী করে বলেছেন তার ব্যর্থতার কারণেই গাজীপুরের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এই প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ওই বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে জুন-২০২১ পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করে গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগ। প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন অংশের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কাজ অন্যতম। নথিপত্র অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কাজটি দু’টি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হয়। প্রথম পর্যায়ের কাজ পায় ঠিকাদার মোনায়েম কবির। তার সাথে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ চুক্তিপত্র সম্পাদন করা হয় যার চুক্তিমূল্য ৩ কোটি টাকার উপরে এবং চুক্তিপত্র অনুসারে কাজ শেষ করার সময়সীমা ছিল ঐ বছরের ২০ অক্টোবর। কিন্তু উক্ত ভূমি উন্নয়ন কাজটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রকল্পের অন্যান্য অংশের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন কুমার চাকমা।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ শাস্তি আরোপ করার শর্তে ৬১৯ দিন বর্ধিত সময় মঞ্জুর করে। অতিরিক্ত সময়ের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বাস্তবায়নে গড়িমসি করায় এবং ধারাবাহিকভাবে ২৮ দিন কাজ বন্ধ রাখার ফলে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে চুক্তি বাতিল করা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এমন ব্যর্থতার পরও উল্টো ঠিকাদার গণপূর্ত বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নামে মামলা করেন।
ঠিকাদার মোনায়েম কবিরের এমন কর্মকান্ডে গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের নিয়মিত ঠিকাদারগণ বিব্রত বোধ করছেন এবং মোনায়েম কবিরের শাস্তি দাবী করছেন। সরেজমিনে এই প্রতিবেদক প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে দেখতে পান যে, মোট তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করেও কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এজন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকলে ঠিকাদার মোনায়েম কবিরকে দায়ী করেন। ঠিকাদারের ব্যর্থতার কারণেই গাজীপুরের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অন্যদিকে, ভূমি উন্নয়ন কাজটি সম্পন্ন না হওয়ায় প্রকল্পের অন্যান্য অংগের কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছিল। অন্যান্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসমূহ তাঁদের স্ব স্ব সাইটে যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে অভিযোগ করছিল। তাই, অতিরিক্ত সময় মঞ্জুরীর পরও ঠিকাদার মোনায়েম কবীর কাজ বাস্তবায়ন না করায় গণপূর্ত অধিদপ্তর শাস্তি আরোপ করার শর্তে আলোচ্য কাজের চুক্তিপত্র বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ প্রদান করে। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় ভূমি উন্নয়নের কাজটি বাস্তবায়নে ৬ মাসের স্কুলে দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরেও শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের অন্যান্য অংগের বাস্তবায়নও পিছিয়ে পড়ে। ফলে, সামগ্রিকভাবে প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গাজীপুরবাসী যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
অভিযোগ রয়েছে বৃহত্তর ফরিদপুরে তার বাড়ী হওয়ায় বিগত সরকারের সময় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি গণপূর্তসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরে দাপিয়ে বেড়াতেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মোনায়েম কবীরের মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

##

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *